টাওয়ার হ্যামলেটস’ কাউন্সিল তার সবচেয়ে মর্যাদাকর এওয়ার্ড ষ্ক্রফ্রিডম অব বারাম্ব প্রদান করেছে কমান্ডার জন লাডগেইটকে। ২৩ মে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের বার্ষিক সাধারণ সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে কমান্ডার লাডগেইটকে এই উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
ফ্রিডম অব বারার উপাধি পেয়ে অভিভূত কমান্ডার লাডগেইট বলেন, আমি কখনোই এটা প্রত্যাশা করিনি। এটা সত্যিই আমার জন্য বিরাট সম্মান। আমি জানিনা এই উপাধির সাথে বিশেষ কোন দায়িত্ব পালনের বিষয় আছে কি না, যেমন রাস্তায় ভেড়ার পালকে একত্রিত করে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া অথবা ব্রিক লেনে রিকশা চালানো। তিনি বলেন, আমি মনে করি টাওয়ার হ্যামলেটস হচ্চেছ অনুপ্রেরণীয় এক জনপদ যেখানে আধুনিক, নগর ও উচ্চচাকাংখী সম্প্রদায়সমূহের ভালো দিকগুলোর সন্নিবেশ ঘটেছে।
কাউন্টির ডেপুটি লেফটেনেন্ট হিসেবে টানা ২২ বছর দায়িত্ব পালন কালে কমান্ডার লাডগেইট এই অঞ্চলে পরিদর্শনে আসা রাজ পরিবারের সদস্যদের অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। তিনি গ্রেটার লন্ডন রিজার্ভ ফোর্সের ক্যাডেট কমিটি ও ক্যাডেট এসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান এবং মেরিন সোসাইটি ও সী ক্যাডেট এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তরুণদের সংগঠনগুলোর গুরুত্ব সম্পর্কে মন্তব্যকালে তিনি বলেন, তরুণরা হচ্চেছ দেশের ভবিষ্যত, আমাদের সবার ভবিষ্যত।
টাওয়ার হ্যামলেটস’ এর মেয়র, জন বিগস ফ্রিডম অব বারা এওয়ার্ড লাভ করায় কমান্ডার জন লাডগেইটকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, একজন স্বেচ্চছাসেবী হিসেবে টানা দুই দশক টাওয়ার হ্যামলেটসে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে তাঁর আত“নিবেদনের চূড়ান্ত রূপ ফুটে ওঠেছে। আমি তাকে এই পুরো সময়টা ধরেই চিনি এবং আমাদের বার্ষিক সভায় তাঁকে সম্মানিত হতে দেখে আমি অভিভূত।টাওয়ার হ্যামলেটসে রয়েছে রাজকীয় প্রসাদ ও দূর্গ – দ্যা টাওয়ার অব লন্ডন এবং যদি আপনি ভোজন বিলাসী হোন, তাহলে পাশেই রয়েছে ব্রিক লেন। রয়েছে আকাশ ভেদি অট্টালিকা আর অর্থ বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র ক্যানরি ওয়ার্ফ, আরেকটু এগিয়ে গেলেই আপনি পাবেন গ্রীনউইচের দিকে সম্প্রসারিত আইল্যান্ড গার্ডেন্স।
কমান্ডার লাডগেইট ১৯৫৯ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত রয়্যাল নেভি এবং রয়্যাল নেভি রিজার্ভে একজন অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সামরিক দায়িত্ব পালন থেকে অবসর নেয়ার পর তাঁকে ওয়াপিং এ অবস্থিত রয়্যাল নেভি রিজার্ভ এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এই দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কমান্ডার লাডগেইট বার্কলেস ব্যাংকে চার্টার্ড একাউনটেন্ট হিসেবে নতুন ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে পুরোপুরি অবসর নেয়ার পর থেকে তিনি তাঁর সময় ও সক্ষমতাকে টাওয়ার হ্যামলেটসের জন্য উ্সর্গ করেন।
২০০৪ সালে ত্কালীন কাউন্সিলর আব্দুল আজিজ সরদার মেয়র থাকাকালে তাঁর প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে তিনি বাংলাদেশ সফরে যান। ফ্রিডম অব বারা এওয়ার্ডের জন্য তাঁর নাম মনোনীত করেন কাউন্সিলর ডেনিস জোনস। তিনি বলেন, কমান্ডার লাডগেইট আমার পাশে দাঁড়িয়ে রানীকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিভাবে রাজ অতিথিদের স“োধন করতে হয়, কিংবা সৌজন্যতা দেখাতে হয়, সেব্যাপারে আমাকে তিনি উপদেশ দিয়েছেন। এছাড়া শেডওয়েল বেসিনে আউটডোর এক্টিভিটি সেন্টারের প্রতি তিনি সব সময়ই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ঐতিহাসিক বারুচালিত জাহাজ এসএস রবিনকে সংরক্ষণ করতে তহবিল সংগ্রহেও তিনি ভূমিকা রাখেন।
তিনি বারার তরুণদের সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত হতেও উ্সাহিত করে আসছেন। রাজনীতি ও তরুণ সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হতে বরার তরুণ সম্প্রদায়কে উ্সাহিত করার জন্যও কমান্ডার লাডগেইটকে মনোনীত করা হয়। এ প্রসঙ্গে কাউন্সিলর সাবিনা আক্তার বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটস ৩১ স্কোয়ার্ডনের ক্যাডেটদেরকে তিনি সব সময় সমর্থন দিয়েছেন, যারা দেশের সেরা এয়ার ক্যাডেট স্কোয়ার্ডন হিসেবে নাম করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই কম বয়স থেকে তাঁকে দেখছি, রাজনীতি সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছি এবং জন লাডগেইট সব সময়ই তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠাবান থেকে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে আমাদের অনুপ্রাণিত করে যাচ্চেছন।
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭ জনকে ফ্রিডম অব বারা উপাধিতে ভূষিত করেছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। এরা হচ্চেছন প্রথম ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার ক্লেমেন্ট রিচার্ড এটলি, ট্যাট গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা হেনরি এডওয়ার্ড ট্যাট ওবিই জেপি, দরিদ্র আইন প্রত্যাহারের জন্য জীবনভর আন্দোলনকারী রাজনীতিবিদ চার্লস উইলিয়াম কী জেপি, ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলনকারী নেইলি ফ্রান্সিস ক্রিসল, দুই বার নোবেল প্রাইজের জন্য মনোনয়ন লাভকারী বিশ্বের অন্যতম নেতৃস্থানীয় শান্তিবাদীদের একজন মুরেইল লেস্টার, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনকারী বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিষ্ট আব্দুল গফফার চৌধুরী এবং কমান্ডার জন লেডগেইট যিনি গত ২২ বছর ধরে টাওয়া হ্যামলেটসে ডেপুটি লেফটেনেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
Leave a Reply