নতুন আলো অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট:: রাজধানীর দক্ষিণখানের প্রেমবাগান এলাকায় একটি ফ্ল্যাট থেকে মা ও দুই সন্তানের অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, তিন-চার দিন আগে মা মুন্নিকে মাথায় আঘাত করে এবং দুই শিশু সন্তানকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুর্গন্ধ ছড়ানোর উৎস খুঁজতে গিয়ে ফ্ল্যাটে ১২ বছরের ছেলে ফারহান উদ্দিন ভূঁইয়া, তিন বছরের মেয়ে লাইবা ভূঁইয়া ও মা মুন্নি ভূঁইয়ার (৩৮) মৃতদেহ পাওয়া যায়। তবে শিশুদের বাবা টিঅ্যান্ডটির উপসহকারী প্রকৌশলী রকিব উদ্দিন ভূঁইয়া লিটনের খোঁজ মেলেনি। দুই সন্তান ও স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে তার কোনো হাত আছে কিনা, সে ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। পুলিশ তাকে খুঁজছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রাত ১১টায় মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
মৃতদেহ উদ্ধারের সময় উপস্থিত ছিলেন এমন এক পুলিশ কর্মকর্তা সমকালকে জানিয়েছেন, এক ঘরের খাটে মা মুন্নি ও মেয়ে লাইবার মৃতদেহ পাশাপাশি পড়েছিল। মুন্নির মাথার ভেতর পর্যন্ত ক্ষত, মগজ বেরিয়ে গেছে। রক্ত খাটে জমাট বেঁধে আছে। লাইবার শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। তাকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। পাশের ঘরের দরজার পাশে ফারহানের মৃতদেহ মেঝেতে পড়েছিল। তাকেও বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রেমবাগান এলাকার ‘আশ্রয়’ নামের পাঁচতলা বাড়ির চতুর্থ তলায় দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে টিঅ্যান্ডটির কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন ভূঁইয়া লিটনের সংসার। অন্তত পাঁচ বছর ধরে এই বাসায় তারা ভাড়ায় আছেন। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের ভাতশালায়। তিনি গুলশান টিঅ্যান্ডটিতে চাকরি করতেন। মাসখানেক আগে বদলি হয়ে উত্তরা টিঅ্যান্ডটিতে যান। তিন-চার দিন আগ থেকে ওই ফ্ল্যাট বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। প্রতিবেশীরা ভেবেছিলেন, হয়তো কোথাও বেড়াতে গেছেন মুন্নিরা। গতকাল বিকেলে ফ্ল্যাট থেকে বিকট দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ খবর আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ফ্ল্যাটের দরজায় গিয়ে উঁকিঝুকি মারেন অনেকে। খবর পেয়ে রকিবের ভায়রা সৈয়দ আহম্মেদ ছুটে আসেন। তালা ভেঙে তিনি দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে মৃতদেহ দেখতে পান। খবর দেওয়া হয় দক্ষিণখান থানায়। পুলিশ ছুটে যায় সেখানে। আশপাশের লোকজনও ভিড় করে। ১৪ বছর আগে রকিব-মুন্নি প্রেম করে বিয়ে করেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চার-পাঁচ মাস আগে রকিব নিখোঁজ হন। পরে কুমিল্লার বুড়িচং এলাকা থেকে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। তিনি জুয়া খেলেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ কারণে তিনি ঋণগ্রস্ত। ওই সময়ে তার নিখোঁজের বিষয়ে থানায় কোনো জিডি বা মামলা হয়নি। ঘটনা সম্পর্কে জানে না পুলিশ।
পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুই সন্তানসহ ওই নারীকে হত্যা করা হয়েছে। তিন-চার দিন আগে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। গৃহকর্তা রকিব নিখোঁজ। তার ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাকে খোঁজা হচ্ছে।