বিশ্বজুড়ে রাষ্ট্রপ্রধানদের দাপুটে কন্যারা
১ min read
ওয়াশিংটন: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্পকে সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে ব্যক্তিগত অফিস প্রদান করা হয়েছে। আর এরমধ্য দিয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী হিসেবে নিজের অবস্থান অনেকটাই দৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছেন।
সফল এই নারী ব্যবসায়ীর যদিও কোন অফিসিয়াল পদবি কিংবা বেতন থাকছে না। বিশ্বজুড়ে রাষ্ট্র প্রধানদের হাই-প্রোফাইল কন্যাদের ক্রমবর্ধমান তালিকায় এটি হচ্ছে সর্বশেষ সংযোজন।
একটি পরিবারিক প্রচারাভিযান – পাকিস্তান
মরিয়ম নওয়াজ মূলত পরিবারের দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। ২০১৩ সালে তার পিতার সফল পুনঃনির্বাচনের প্রচারাভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি এখন তার ডানপন্থী দল পাকিস্তান মুসলিম লীগের (নওয়াজ) জন্য কাজ করছেন।
বিবিসি উর্দু’র আসিফ ফারুকী বলেন, ‘তিনি (মরিয়ম নওয়াজ) সব সময়ই মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে চান।’ আসিফ ফারুকী বেশ কয়েকবার তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘স্পষ্টত তিনি একজন ক্ষমতাশালী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। যদিও এখনো পর্যন্ত তিনি তার বাবার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত হননি।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ শরিফ (৪৩)।
গত বছর তথাকথিত পানামা পেপারসে তার নাম ওঠে। এতে বলা হয়, অঘোষিত অফশোর কোম্পানির সঙ্গে মরিয়ম নওয়াজ ও তার দুই ভাইয়ের লিঙ্ক ছিল এবং লন্ডনে বিলাসবহুল প্রোপাটিজ অর্জনে তাদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে।
কিন্তু তার বাবা ওই অভিযোগ নাকচ করে দেন। তার এবং তার পরিবারবর্গকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতেই এটি করা হয়েছে বলে নওয়াজ শরীফ দাবি করেছিলেন।
এই অভিযোগ বর্তমানে পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই অভিযোগের রায় দেয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
‘রক ও রোল ড্যান্সার’ – রাশিয়া
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অত্যন্ত প্রতিরক্ষামূলক এবং এখনো পর্যন্ত তার দুই কন্যা সম্পর্কে খুব সামান্যই জানা গেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মেয়ে ইয়েকাতেরিনা।
বিবিসির রাশিয়ার সংবাদাদাতা ফামিল ইসমেইলভ বলছেন, ‘পুতিনের মেয়েদের সম্পর্কে মিডিয়ার যেকোনো ধরনের আগ্রহে রাশিয়ান কর্মকর্তারা কিছুটা সন্দেহপ্রবণ। তাদের সম্পর্কে অনেক তথ্য প্রকাশ পেলেও তা তাদের পরিবার থেকে কখনো নিশ্চিত করা হয়নি।’
২০১৫ সালে সর্বকনিষ্ঠ কন্যা ইয়েকাতেরিনা স্পটলাইটে আবির্ভূত হয়। পরে প্রকাশ পায় যে, তিনি কাতেরিনা টিকোনোভা ছদ্মনাম ব্যবহার করে মস্কোতে বসবাস করছেন।
তদবধি রাশিয়ানরা বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট থেকে জেনেছেন যে, কিরিল শামালভ নামে ইয়েকাতেরিনা তার বাবার এক বন্ধুর ব্যবসায়ী পুত্রকে বিয়ে করেছেন। বর্তমানে এই দম্পতি গ্যাস ও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে আনুমানিক ২ বিলিয়ন ডলারের মালিক।
৩০ বছর বয়সী এই নারী বর্তমানে দেশটির সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির ‘ইন্টেলেকচুয়াল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের দায়িত্বে আছেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, তিনি দেশটির কয়েক মিলিয়ন ডলারের চুক্তিগুলো তদারকি করছেন এবং পুতিনের ‘ইনার সার্কেলের’ উপদেষ্টাদের একজন হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
এছাড়াও ইয়েকাতেরিনা একজন উৎসাহী নৃত্যশিল্পী। সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ‘রক ও রোল ড্যান্সার’ ২০১৩ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি পঞ্চম হন।
আদরের কন্যা – তুরস্ক
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের কনিষ্ঠা কন্যা সুমেয়ি এরদোগান (৩১)। সুয়েমি তার বাবা এরদোগানের অত্যন্ত আদরের কন্যা হিসাবে সবার কাছে পরিচিত।
ব্যবসায়ী স্বামীর সঙ্গে তুকি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের কনিষ্ঠা কন্যা সুমেয়ি এরদোগান।
বিবিসি তুর্কি প্রতিনিধি আরেম কোকের বলছেন, ‘তার বাবা তাকে (সুমেয়ি) আদর করে ‘মায় গেজেল’ বলে ডাকেন। অত্যন্ত সুন্দর এবং দামি কোন মানুষকে তুর্কিরা এ নামে ডেকে থাকেন।’
সুমেয়ি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল সায়েন্সে পড়াশুনা করেছেন। জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে তিনি তার পিতার একজন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং অসংখ্যবার কূটনৈতিক ভ্রমণে পিতার সফরসঙ্গী হয়েছেন।
২০১৫ সালে জল্পনা করা হয় যে, সুমেয়ি পার্লামেন্টের একটি আসনে নির্বাচন করতে পারেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি তা করেনি।
তিনি বর্তমানে তুর্কি নারী অধিকার এডভোকেসি গ্রুপের সঙ্গে জড়িত আছেন। এছাড়াও,সুমেয়ি তার পিতার প্রচারণার কাজ ও তার সরকারের একজন স্পষ্ট সমর্থক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
আফ্রিকার প্রথম ধনকুবের নারী- অ্যাঙ্গোলা
ইসাবেল দস সান্তোস (৪৩) অ্যাঙ্গোলার প্রেসিডেন্ট হোসে এদুয়ার্দো দস সান্তোসের জ্যেষ্ঠ কন্যা। প্রেসিডেন্ট হোসে এদুয়ার্দো ১৯৭৯ সাল থেকে দেশ শাসন করেছেন।
অ্যাঙ্গোলার প্রেসিডেন্টের জ্যেষ্ঠ কন্যা ইসাবেল দস সান্তোস (৪৩)।
ব্রিটেনে পড়াশুনা করা ইসাবেল দস সান্তোস রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানি ‘সোননগল’ এর প্রধান এবং ২০১৩ সালে ফোর্বসম্যাগাজিনের তালিকায় তিনি আফ্রিকার সবচেয়ে ধনী নারী ও প্রথম বিলিয়নিয়ার হিসেবে ওঠে আসেন।
তিনি ৩.২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থের মালিক বলে সেসময় ম্যাগাজিনটির তথ্যে বলা হয়।
এছাড়াও, তিনি অর্থ, টেলিযোগাযোগ ও হীরা শিল্পে বড় অর্থ বিনিয়োগ করেছেন এবং এটি তাকে এ্যাঙ্গোলার সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীতে পরিণত করেছে।
এ্যাঙ্গোলার সাবেক ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র পর্তুগালেও তিনি বিদ্যুৎ, তেল ও গ্যাস খাতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলছে দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের একটি। পিতার অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে ডস সান্তোস বিপুল এই অর্থের মালিক হয়েছেন বলে প্রায় তাকে সমালোচনার মুখে পরতে হয়। যদিও তার উপদেষ্টারা দৃঢ়ভাবে এ অভিযোগকে অস্বীকার করেছেন।
চিফ অব স্টাফ ও সিনেটার – তাজিকিস্তান
তাজিকিস্তানের দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট এমোমলি রাহমানের কন্যা ওজোদা রাহমান (৩৯)।
তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্টের নয় কন্যার একজন ওজোদা রাহমান।
আইন বিষয়ে ওজোদা রাহমানের ডিগ্রি রয়েছে এবং ২০০৯ সালে দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি কূটনৈতিক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।
২০১৬ সালে তার পিতা তাকে দেশটির প্রেসিডেন্টশিয়াল প্রশাসনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। এছাড়াও, তিনি সিনেটের একটি আসনেও জয়ী হন।
ওজোদা তাজিকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রথম ডেপুটি চেয়ারম্যান জামোলিদ্দিনকে বিয়ে করেন এবং এই দম্পতির ঘরে পাঁচজন সন্তান রয়েছে।
সরকারি চাকরিতে এমোমলি রাহমানের নয়জন সন্তানের মধ্যে ওজোদাই কেবল একমাত্র সদস্য নয়। তার বড় ভাই রুস্তম দেশটির রাজধানী দুশানবের মেয়র এবং ছোট বোন রোখসোনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করছেন।
অন্যান্য আত্মীয়রাও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের পদে অধিষ্ঠিত আছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে; যা রাহমান পরিবারকে তাজিকিস্তানে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও সম্পদশালী পরিবারে পরিণত করেছে।
যৌন সংখ্যালঘুদের কণ্ঠস্বর – কিউবা
কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রোর কন্যা হিসিবে মারেলিয়া কাস্ত্রো প্রয়াত বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর ভাইঝি।
কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো কন্যা মারেলিয়া।
বিবিসি মুন্ডোর লিলিয়েট হেরেডেরো বলছেন, ‘তার মা ভিলমা এসপিন নারীদের অধিকার নিয়ে লড়াই করেছেন। আর এখন তার মেয়ে একরকম তার পদাঙ্ক অনুসরণ করছে।’
মারেলিয়া কাস্ত্রো ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। স্পষ্টভাষী মারেলিয়া কাস্ত্রো একজন সংসদ সদস্য এবং যৌন সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে লড়াই করার জন্য তিনি অত্যন্ত সুপরিচিত।
তিনি রাজধানী হাভানায় সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত সেক্স এডুকেশন বিষয়ক ন্যাশনাল সেন্টারের প্রধান হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।