অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট: করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন এক জন প্রতিনিধি। করোনার শুরু থেকেই আক্রান্ত ব্যক্তির দাফন-কাফনের কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। গত ৯ জুলাই চার মাস পূর্ণ হতে চলেছে এ কার্যক্রমের। সচেতনতার প্রচারপত্র বিলি থেকে শুরু করে সর্বশেষ প্লাজমা সংগ্রহ কার্যক্রমও চলমান রেখেছেন তিনি। কথা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জে মানবিক সংকটের সময় উদয় হওয়া এক কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের ব্যাপারে।
করোনার শুরু থেকেই তিনি নেমেছেন জীবনের মায়া ত্যাগ করে। তার এ কাজে প্রথমে তিনি একা থাকলেও বর্তমানে অনেকেই তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তিনি নিজেই গঠন করেছেন টিম। করোনায় আক্রান্তদের দাফন ও সৎকার, করোনাকালীন লকডাউনে ঘরে ঘরে খাদ্য বিতরণ, করোনার শুরুতে জনসচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিতরণ, অনলাইন অফলাইনে মানুষকে ঘরে থাকতে ও সচেতন করতে নানা কার্যক্রম, হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি ও বিতরণ, বিনামূল্যে সবজি বিতরণ, ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিক্রি, টেলি মেডিসিনসেবা, অক্সিজেন সাপোর্ট, প্লাজমা ডোনেশনসহ নানা কার্যক্রমে তিনি আলোচিত। এসব কাজে তিনি নেননি কোনো আর্থিক মূল্য কিংবা বিনিময়। তার এ যুদ্ধে সাহস পেয়েছে পুরো দেশ ও এসব কার্যক্রমে একে একে এগিয়ে এসেছে অনেকেই। অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে খোরশেদ যেন এক নতুন সৈনিক যে কিনা অদৃশ্য এক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইটা অব্যাহত রেখেছেন।
তার এ কার্যক্রমে এখন পর্যন্ত ৯৮টি দাফন যার মধ্যে নয়টি স্বাভাবিক মৃত্যু বাদে বাকি সবগুলোই করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া, ৬০ হাজার বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার, আটটি অক্সিজেল সিলিন্ডারে অক্সিজেন সাপোর্ট এবং অর্ধশতাধিক প্লাজমা সংগ্রহ করে ডোনেশন, প্রায় ১৪ হাজার মানুষকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, ১০ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে সবজি বিতরণ, ১৫ হাজার মানুষকে টেলিমিডিসিন সেবা দিয়েছেন তিনি ও তার টিম। এসব কার্যক্রম এবং প্রতিটি কাজের অংশেই তিনি এখন একজন আইডল।
এসব কাজ করতে গিয়ে খোরশেদ ও তার স্ত্রী এবং তার টিমের কয়েকজন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবুও যুদ্ধটা থেমে যায়নি বরং সুস্থ হয়ে নিজেরাই প্লাজমা দিয়েছেন এবং পুরোদমে আবারো কাজ করেছেন। খোরশেদ নিজেই দু’বার প্লাজমা দিয়েছেন।
তার এ কাজে তাকে সহায়তা করেছেন প্লাজমা টিমে খন্দকার নাঈমুল আলম, আরাফাত খান নয়ন, ইসতিয়াক সাইফি, শাহেদ আহমেদ, রিজন আহমেদ, অক্সিজেন টিমে এস কে জামান, দাফন টিমে হাফেজ শিব্বির, আশরাফুজ্জামান হিরা, আনোয়ার হোসেন, সুমন দেওয়ান, আক্তার শাহ, আয়ান আহমেদ রাফি, রফিক হাওলাদার, লিটন মিয়া, শফিউল্লাহ রনি, রিয়াদ, নাঈম, সেলিম, শহীদ, ত্রাণ টিমে জয়নাল আবেদীন, আনোয়ার আলম বকুল, নাজমুল আলম নাহিন, রিটন দে, শওকত খন্দকার, রানা মুজিব, নারী টিমে তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা, মেম্বার রোজিনা আক্তার, উম্মে সালমা জান্নাত, শিল্পী আক্তার, রাণী আক্তার, টেলি মেডিসিন টিমে ডা. জেনিথ, ডা. ফায়জানা ইয়াসমিন স্নিগ্ধা, ডা. আরিফুর রহমান, ডা. খাদিজাসহ কয়েকজন চিকিৎসকরা। পুরো টিমের সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন টিপু রেজা।
এদিকে এ লড়াই নিয়ে খোরশেদ বলেন, এ লড়াইটা মানবিকতাকে টিকিয়ে রাখতে। প্রথমদিকে এমন একটা সময় ছিল যখন বাবা মারা গেলে সন্তান সে ঘরেও যেতেন না। মরদেহ আমরা আনতে গেলে ঘরের চাঁদরসহ আমাদের দিয়ে দিতো। তখন এ মানবিক সংকট কাটাতে আমরা মাঠে নামি। ধীরে ধীরে ভয় কাটে ও মানুষ এগিয়ে আসে। এখন সেই আগের অবস্থা নেই। আমাদের লড়াইতে সবাইকে বাঁচাতে না পারলেও যে ক’জনের প্রাণ বেঁচেছে তাতেই আমাদের পাওয়া। আমরা চাই মানবিকতা টিকে থাকুক, সতর্কতায় করোনা মোকাবিলা হোক।