শাবিপ্রবির উপাচার্যের সাফল্যের তিন বছর পূর্তিতে শাবিপ্রবি শিক্ষকের আবেগ গণ লেখাঃ
স্যার, আমার বিনম্র শ্রদ্ধা ও বিনয় সম্ভাষণ জানবেন।শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে গৌরবময় তিনটি বছর অতিক্রম করায় আপনাকে অভিনন্দন ও বিনম্র শ্রদ্ধা।
বাঙালির মধ্যে সকলেই উপাচার্য হিসেবে সফল হবার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেননি। যাঁরা পেরেছেন তাঁদের মধ্যে স্যার এ এফ রহমান, অন্নদাশঙ্কর রায়, তপোধীর ভট্টাচার্য, খান সরোয়ার মুর্শিদ, এ আর মল্লিক, আবুল ফজল ও জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, ফজলুল হালিম চৌধুরী অন্যতম। তবুও তাঁদের বিষয়েও নানা ভিন্ন মতও আছে। কিন্তু নব্বই পরবর্তী নব গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে ও বাঙালিদের মধ্যে উপাচার্য হিসেবে গৌরবময় আসন কেউ অর্জন করতে পারেননি। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও বৈশ্বিক মহাদুর্যোগে মধ্যেও আপনি তিনটি বছর যে অনন্যতার সঙ্গে অতিক্রম করেছেন তা শুধু প্রশংসনীয় নয়; সকল উপাচার্যের জন্য তা যেমন গৌরবের তেমনি বাঙালিদের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক। তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন উপাচার্যরা তাঁদের ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নের মুখোমুখি করেছেন; অথচ আপনি অঢল দৃঢ়তার সঙ্গে আপনার ব্যক্তিকে শুভ্রতায় ও নির্মলতায় নবরূপে বিনির্মাণ করেছেন। আপনার কঠোর পরিশ্রম, সাহসিকতা, প্রখর রৌদ্রের মতো গৌরবময় রাজনৈতিক দক্ষতা; সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রদুন্মতা, গতিশীল প্রশাসনিক দক্ষতা, সর্বোপরি নির্লোভ ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন কর্মপরিকল্পনা আপনাকে করেছে অনন্য। তিন বছর মাত্র তিন বছর! অথচ একটি প্রতিষ্ঠানের যেন নবজন্ম। এই প্রথম আপনি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সমস্ত কাজে দায়িত্বশীল ও গতিশীল করতে পেরেছেন। এই তিনটি বছরে প্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয় স্বপ্ন দেখতে শিখেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে প্রকৃত অর্থেই এই বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়।
ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও বৈশ্বিক সকল প্রকার (মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক) মহাদুর্যোগে আপনার প্রশাসনিক দক্ষতা অনন্যতায় পৌঁছে গেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের সকল ষড়যন্ত্র ও প্রতিমুহূর্তের অসহযোগিতার মনে ভাবের সঙ্গে লড়াই করে জটিল ও কুটিল পথকে করেছেন ও করছেন সরল ও মসৃণ। শিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তির উন্নয়নে যে ভূমিকা আপনি পালন করেছেন এবং করছেন তাতে নিঃসন্দেহে আগামী এক যুগ পর আপনাকে এই রাষ্ট্রের আদর্শ ও দৃষ্টান্তমূলক উপাচার্য হিসেবে সর্বত্র উপস্থাপন করা বলেই আমি বিশ্বাস করি।
আর একটি বছর শুধু অপেক্ষা! কারণ আপনি ছাড়া দেশের অন্য কোনো উপাচার্য গৌরবময় কর্মতৎপরতা দেখাতে পারেননি। তাই খুব করে মনে প্রাণে চাই আপনি সুস্থ থাকেন। আপনি সুস্থ থাকা মানেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি, আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি মানেই দেশের উন্নতি ও আপনি আদর্শ উপাচার্য হিসেবে গৌরব লাভ করবেন।
আহমদ ছফা ‘গাভী বিত্তান্ত উপন্যাসের লিখে এবং মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ‘মোহাব্বত আলীর একদিন’ গল্প লেখার মাধ্যমে এদেশের উপাচার্যদের সম্পর্কে যে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করেছেন তার উচিত জবাব হবে আপনার গৌরবময় উপাচার্যের জীবন। আপনার সত্য, সুন্দর ও কল্যাণকর দিকগুলো একদিন নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে কেউ লিখবেন। বিশ্ববিদ্যালয় ও উপাচার্য সম্পর্কে সমাজ ও মানুষের আস্থা বিনির্মাণ করবেন। আপনি সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, আখলাকুর রহমান, আনিসুর রহমান, ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ সহ আপনার সকল শিক্ষকদের আশীর্বাদ পুষ্ট ছাত্র।
মানুষের প্রকৃত পরিচয় তাঁর ব্যবহারে। জ্ঞান অলংকারিক মাত্র। ব্যবহার ও কর্মই মানুষকে চিরস্মরণীয় করে রাখে। আপনার উদার মানসিকতা ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন কর্মপরিকল্পনা আপনাকে স্মরণীয় করে রাখবে। মনে প্রাণে প্রার্থনা করি আর একটি বছর যেন আপনার নব উদ্যমে ও গৌরবময় ভাবে অতিক্রম করে দেশের শ্রেষ্ঠ উপাচার্যের গৌরব অর্জন করতে পারেন। তারপর আরো উচ্চ সন্মানে আসীন হবেন।
স্যার, লেখায় কোনো ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা মার্জনা করবেন। আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। আপনি ও পরিবারের সকলকে নিয়ে সুন্দর, সুন্দর ও নির্মল জীবন যাপন করুন। আপনার জন্য নিরন্তর শুভকামনা। শুভ রাত্রি।
লেখক
সোহেল রানা
সহকারী অধ্যাপক
বাঙলা বিভাগ সাস্ট।