1. admingusar@gmail.com : admingusar :
  2. crander@stand.com : :
  3. bnp786@gmail.com : editor :
  4. sylwebbd@gmail.com : mit :
  5. zia394@yahoo.com : Nurul Alam : Nurul Alam
  6. mrafiquealien@gmail.com : Rafique Ali : Rafique Ali
  7. sharuarprees@gmail.com : Sharuar : Mdg Sharuar
  8. cardgallary17@gmail.com : Shohidul Islam : Shohidul Islam
  9. wpsupp-user@word.com : wp-needuser : wp-needuser
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন

জগন্নাথপুর টু সিলেট সড়কঃ মামলেট কাহিনী – মোহাম্মদ মুকিত

  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১

 

যদ্দুর মনে পড়ে গত শতাব্দির আটষট্টি সালে আমি সর্বপ্রথম সিলেট শহরে গিয়েছিলাম। তখন ছিল আষাঢ়ে বর্ষকাল। ভোর ছ’টায় বাড়ী থেকে রওয়ানা হয়ে আমরা সিলেট শহরে পৌঁছি সন্ধ্যা ছ’টার দিকে। দীর্ঘ সময়ের পথ। বাড়ি অর্থাৎ ভবানীপুর থেকে জগন্নাথপুর পর্যন্ত ডিঙ্গি। তারপর গয়না নৌকা। এরপর ‘মুড়ির টিন’ খ্যাত বাসে চড়ে সিলেট শহর।
অনেক সাধের জেলা শহরের বৈদ্যুতিক বাতি দেখলাম জীবনে প্রথম। দেখলাম কালের সাক্ষী সুরমা নদীর পুল (ক্বীন ব্রিজ)। রাতে আমরা উঠেছিলাম বন্দর বাজারস্থ ফেরদৌস হোটেলে। গ্রামের ছেলে শহরের রূপালী হাওয়া গা-গতরে লাগতেই নিন্দ্রা চেপেছিল সাততাড়াতাড়ী, গভীর ঘুম। সকালে নাস্তা খাওয়ার জন্যে ঢুকেছিলাম ওরিয়েন্টাল রেস্টুরেন্টে। অর্ডার দেওয়া হলো, পরোটার সাথে ‘মামলেট’। পুলকিত আগ্রহে অপেক্ষমান ছিলাম। না-জানি ‘মামলেট’ দেখতে কিংবা খেতে কেমন হবে! কিন্তু আপ্যায়ন করা হলো- ‘আন্ডা বিরান’। মনে মনে বলেছিলাম, গ্রামের বাড়ীর ‘এন্ডাবিরান’ বুঝি শহরে এসে ‘মামলেট’ হয়েছে!
অবশ্য ‘এন্ডাবিরাণ’ বা ‘আন্ডাবিরাণ’ বা ‘মামলেট’ যা-ই বলি না কেনো, একই জিনিসের এইসব নাম পরিবর্তন হয়েছে কেবলমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, জগন্নাথপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা সেই আগের মতোই। খুব যে উন্নতি হয়েছে, তা কিন্তু জোর দিয়ে বলা যাবে না।
এইতো মাত্র কয়েক দশক আগের কথা। তখন জগন্নাথপুর থেকে সিলেটে যাওয়ার রাস্তা ছিল মাত্র দু’টো। বর্ষাকালে জগন্নাথপুর থানাঘাট থেকে গয়না নৌকায় হাওর-খাল-বিল-নদী-নালা পাড়ী দিয়ে গোয়ালা বাজার গিয়ে নৌকা ভিড়তো। দুর্বিসহ এই পথে নদীর স্রোত আর বৃষ্টি ও তুফানের ধাক্কায় গলা শুকিয়ে যেতো মৃত্যুর ভয়ে। প্রকৃত প্রস্তাবে ঐ স্থানটা গোয়ালা বাজারও নয়! সম্ভবতঃ পাঁচপাড়া (এই মুহূর্তে সঠিক নামটা মনে পড়ছে না), গোয়ালা বাজার থেকে প্রায় এক মাইল দূরে ঢাকা-সিলেট বিশ্বরোড়ের পাশেই ছিল সেই গয়না ঘাট। বর্ষাকালে জগন্নাথপুর থেকে সিলেট যাওয়ার এটাই ছিল খুব সহজ রাস্তা।
দ্বিতীয়টা ছিল জগন্নাথপুর থেকে রাণীগঞ্জ লঞ্চ ঘাট। সেখান থেকে লঞ্চ যোগে শেরপুর ঘাট। তারপর ঢাকা সিলেট যেখানে খুশি যাওয়া যেতো।
আর সবেচেয়ে সহজ ব্যবস্থা ছিলো হেমন্ত ও শীত-বসন্ত কালের দু’পায়াযান। অর্থাৎ পায়ে হাঁটা পথ। জগন্নাথপুর থেকে মীরপুর-কেউনবাড়ী হয়ে বিশ্বনাথ ও রশিদপুর। হাঁটতে হতো অন্তত ১৮ থেকে ২০ মাইল। ইতিহাসের পাতায় স্পষ্ট দেখা যায়, ষাটের দশকের আইয়ুব শাসনামলে কখনো মীরপুর বাজার, কখনো কেউনবাড়ী বাজারে রাস্তার পাশে বসে থাকতেন বনগাঁর বশর মিয়া। মাঝেমধ্যে তাঁর সাথে বসতেন বুড়াখালি গ্রামের জব্বার মিয়া। এই পথ দিয়ে লোকজন পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন দেখলেই তাঁরা টিনের চোঙ্গায় মুখ লাগিয়ে শ্লোগান দিতেন, ‘জগন্নাথপুর থেকে বিশ্বনাথ, সড়ক চাই, সড়ক চাই’।
ওদিকে কলকলিয়া-দরগাপাশা হয়ে অন্তত কুড়ি-বাইশ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে দু’পায়াযান চলতো পাগলা বাজার পর্যন্ত। সেখান থেকে গাড়ীতে সুনামগঞ্জ কিংবা সিলেটেও যাওয়া যেতো।
অধুনা প্রতিষ্ঠিত সিলেট বিভাগের মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, জগন্নাথপুরের অবস্থান চারটি জেলারই প্রায় মধ্যখানে অবস্থিত। অর্থাৎ জগন্নাথপুরের উত্তর-পূর্বে সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা। দক্ষিণ-পূর্বে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলা, দক্ষিণ-পশ্চিমে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা। পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম কোণেও হবিগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ জেলা অবস্থিত।
আধুনিক যুগের অর্ধশত বছর পার হয়েছে। সিলেট বিভাগের মধ্যস্থলে অবস্থিত এই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। যেমনটি হয়নি জগন্নাথপুরের মানুষের চিন্তা-চেতনার। কারণ অর্ধশতাব্দিরও আগে দেখেছিলাম সিলেটের ক্বীন ব্রিজ। যেটি ব্রিটিশ আমলে (১৯৩০ সালে) তৈরী করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা প্রথম থেকেই জানতো যে, ভারতে তারা বেশিদিন টিকতে পারবে না। তারপরও তারা যে সকল উন্নয়ণমূলক কাজ করেছে সেগুলো কালের সাক্ষী হয়ে গর্বের সাথে দাঁড়িয়ে আছে যত্রতত্র। মাইকেল ক্বীনের কুকীর্তিতে আসাম ও ত্রিপুরার ইতিহাস এখনও রঞ্জিত। ‘প্রতাবগড়’-এর মতো অনেক ছোট ছোট রাজ্য এই অঞ্চলের মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে গেছে গভর্ণর মাইকেল ক্বীনের কারণে। তারপরও সিলেট তথা ইতিহাসের ছাত্ররা সম্মানের সাথে মাইকেল ক্বীনের নাম উচ্চারণ করতে বাধ্য হন। শুধুমাত্র সুমরা নদীর উপর দাঁড়িয়ে থাকা এই ব্রিজটির কারণে।
আজ আমরা যারা বিলেতে কিংবা যুক্তরাজ্যে বসবাস করছি, সকলেই জানি যে, কেউই চিরস্থায়ী থাকবো না। এদেশেও নয়, এই দুনিয়াতেও নয়। অথচ আমাদের স্মৃতি ও কর্মতৎপরতা স্থায়ী থাকবে যদি আমরা সঠিক এবং স্মৃতিময় কাজ রেখে যেতে পারি।

 

সত্যিকার অর্থে এখানো আমাদের দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন হয়নি। এখনো আমরা ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’ এই চিন্তাই করি। কিন্তু এই বাঁচাটা যে অস্থিত্বহীনতা তা আমরা অনেকেই চিন্তা করি না। যে কারণে যুক্তরাজ্যে বা বিলেতে আমরা যেটাকে ‘অমলেট’ বলি, স্বদেশের শহরে সেটিকে বলি ‘মামলেট’ আর বাড়িতে সেটা সেই আঞ্চলিক ভাষার ‘এন্ডাবিরানই’। অর্থাৎ নবনির্মিত জগন্নাথপুর টু বিশ্বনাথ সড়কের মতো ‘বাইরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট’।
অতএব ‘ভয়েস অব জগন্নাথপুর’ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, তথাকথিত আসামের গভর্ণর মাইকেল ক্বীন-এর কবরের অস্থিত্ব এখন আর নাই। কেউ জানেও না। কিন্তু মাইকেল ক্বীন এখনো ব্রিজের বদৌলতে জীবিত আছেন হাজারো মানুষের স্মৃতিতে, ইতিহাসে। সুতরাং জগন্নাথপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা কর্মে যারা কর্মরত আছেন, তারা যে যেভাবে পারেন খেতে থাকেন, খান, কিন্তু দয়াকরে কাজগুলো মজবুত ও উন্নতমানের করে যান। যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধররা গর্ব করে বলতে পারে যে, ‘এই রাস্তাটা আমার চাচা-বাবা-দাদা কিংবা পূর্বপুরুষের আমলে তৈরী করা হয়েছিল।’

জগন্নাথপুর টু বিশ্বানাথ সড়ক চাই রাস্তা চাই,
দাদার আমলের এই দাবী তথৈবচ সাঁই সাঁই।
অন্তরে দাবী মুখে শ্লোগান কত জীবনের অবসান,
এই রাস্তায় এখনো চলে তথাকথিত দু’পায়াযান।
জগন্নাথপুর টু বিশ্বানাথ পাকা রাস্তার ঠিকাদার,
এই এলাকার মানুষ তারা চেয়ারম্যান ও মেম্বার।
নেতানেত্রীর নাম লেখা হয় পুল-ব্রিজের ফলকে,
কদিন পরেই ঢাকা পড়ে চুন-সুপারীর পিকে।
দেখলাম কত নেতাকর্মী নির্বাচনের আগে পরে,
রাস্তার গম চুরি করেও শেষ ঠিকানা কবরে।
এই কারণে বলি ভাই, ভালো কাজে মন দাও,
কবরে গিয়েও হাজার বছর মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই পাও।

মোহাম্মদ মুকিত জগন্নাথপুর সুনামগঞ্জ

Comments are closed.

এই ধরণের আরো খবর

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস

সর্বমোট

আক্রান্ত
সুস্থ
মৃত্যু
সূত্র: আইইডিসিআর

সর্বশেষ

আক্রান্ত
সুস্থ
মৃত্যু
স্পন্সর: একতা হোস্ট
© All rights reserved © 2021 notunalonews24.com
Design and developed By Syl Service BD