এখন থেকে নির্ধারিত মূল্যে রিং,দ্বিধাদ্বন্দ্বে হাসপাতালগুলো
১ min read
নতুন আলো নিউজ ডেস্ক: সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে হৃদরোগীদের স্ট্যান্ট বা হার্টের রিং দেয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে হাসপাতালগুলো। হাসপাতালগুলোতে জনসাধারণের চোখের সামনে মূল্য তালিকা টানানোর নির্দেশনা থাকলেও গতকাল অনেক হাসপাতালে তা দেখা যায়নি। কিছু কিছু হাসপাতাল সরকার নির্ধারিত মূল্যে রিং পরালেও অনেক হাসপাতালে এখনো তালিকা হাতে পায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে রিংয়ের এমআরপি মূল্য নিয়ে আজ রোববার ওষুধ প্রশাসনে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সরজমিন গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগের কোনো জায়গায় হার্টের রিংয়ের মূল্য তালিকা টানানো দেখা যায়নি। এমনকি হাসপাতালের অন্য কোথাও চোখে পড়েনি। লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা থেকে আসা হার্টের রোগী মো. দুলাল। তার বয়স ৪৫ বছর। তিনি বলেন, তারা জানেন না হার্টের রিংয়ের মূল্য কত? পত্রিকার খবরে এসেছে তারা শুনেছেন। কিন্তু হাসপাতালের কোথাও মূল্য তালিকা টানানো চোখে পড়েনি বলে সঙ্গে আসা তার ভাগ্নে রুবেল উল্লেখ করেন। তবে চিকিৎসকরা তাদের জানিয়েছেন, হার্টের রিংয়ের দাম কমেছে। কয়েকটি দিন অপেক্ষা করেন। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, তাদের হাতে এখনো মূল্য তালিকা আসেনি। তবে জাতীয় হৃদ?রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এমন তালিকা এসেছে, এটা তিনি শুনেছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তালিকা না আসলে কিভাবে টানাবো। তিনি ওষুধ প্রশাসনের হার্টের রিংয়ের মূল্য নির্ধারণ কমিটিতে আছেন উল্লেখ করে আর কিছুই বলতে রাজি হননি। সূত্র জানায়, ঢামেক হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ জনকে হার্টের রিং পরানো হয়।
এদিকে গতকাল থেকে জাতীয় হৃদ?রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পরিবর্তিত মূল্যে রোগীদের স্ট্যান্ট দেয়া শুরু হয়েছে। হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান বলেন, এই হাসপাতালে সরকার নির্ধারিত মূল্যেই স্ট্যান্ট রোগীদের দেয়া হয়েছে। রোগীরা সন্তুষ্ট। এমআরপি ছাড়া কোনো স্ট্যান্ট এই হাসপাতালে আসবে না। স্ট্যান্ট সরবরাহ করে এমন দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিও জানিয়েছেন, তারা সরকার নির্ধারিত মূল্যে রোগীদের স্ট্যান্ট দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তারাও সরকার নির্ধারিত মূল্যে স্ট্যান্ট রোগীদের দিয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতাল ইবনে সিনার কার্ডিয়াক সেন্টারে যোগাযোগ করলে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ সহকারি ব্যবস্থাপক মাখফুর রহমান মুরাদ বলেন, তারা সরকার নির্ধারিত হার্টের রিংয়ের মূল্য তালিকা হাতে পেয়েছেন। তা জনসাধারণের জন্য হাসপাতালে টানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, সরকার নির্ধারিত মূল্যেই রোগীকে হার্টের রিং পরানো হবে এই হাসপাতালে। এই কর্মকর্তা জানান, ইবনে সিনার কার্ডিয়াক সেন্টারে প্রতি মাসে গড়ে ৩০ থেকে ৪০টি হার্টের রিং পরানো হয়।
এর আগে রিংয়ের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা ১৯শে এপ্রিল ধর্মঘট আহ্বান করেন এবং সরকারি হাসপাতালে রিং সরবরাহ বন্ধ করে দেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন রোগী ও তাদের স্বজনরা। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনার পর ধর্মঘট আহ্বানের কয়েক ঘণ্টা পরেই তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। কয়েক দিন ধরে রিং নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির পর শনিবার থেকে সরকারিভাবে নির্ধারিত এমআরপি বা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। অধিদপ্তরের এক পরিচালক বলেন, এ পর্যন্ত মোট ৩৭টি আইটেমের রিংয়ের ওপর এমআরপি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আর এ সংক্রান্ত চিঠি এরই মধ্যে ২৭টি হাসপাতালে চলে গেছে। সবাইকে বলে দেয়া হয়েছে মূল্য তালিকা টানিয়ে দিতে। বাকিগুলোতেও পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় সব রিং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান তাদের বিভিন্ন আইটেমের রিংয়ের এমআরপি অনুমোদন করিয়ে নিয়েছে। ফলে অনুমোদিত আইটেমের কোনোটিই ওই দামের বাইরে দেশের কোথাও বিক্রি করা যাবে না। রিংয়ের গায়ে মূল্য, উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ লেখা থাকতে হবে। ওষুধ প্রশাসন থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ইস্যুকৃত কার্ডিয়াক স্ট্যান্ট (হার্টে রিং)-এর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রতি একক সর্বোচ্চ মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন ২০ হাজার ৪০৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে শাহীন বলেন, আমরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে।