প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর ওপর বর্বর নির্যাতন
১ min readলন্ডন ফেরত ব্যারিস্টার ছেলে মো. অলিউর রহমান কচি। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি) -এ বিবিএ পড়ুয়া মেয়ে। পারিবারিকভাবে বিয়ের কথা। কিন্তু ছেলের বিকৃত মানসিকতা ও আচরণগত সমস্যার কারণে বিয়েতে না করে মেয়ের পরিবার। তাই ওই মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে। একপর্যায়ে গত শনিবার রাজধানীর কলাবাগান থেকে অপহরণ করা হয়। এরপর একটি বাসায় আটকে রেখে ৫ লাখ টাকার জন্য চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। অবশেষে গত সোমবার মধ্যরাতে ওই মেয়েকে উদ্ধার এবং কচিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব সূত্র জানায়, এক বছর আগে অলিউর রহমান ওরফে কচির সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ের বিষয়ে আলোচনা হয় কলাবাগান এলাকার এক তরুণীর। সম্প্রতি কচি দেশে ফিরে আসেন। লন্ডন থেকে বার এট ল’ করে দেশে ফিরলেও তার আচার-আচারণে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। বিকৃত মানসিকতার পরিচয় মেলে। এ বিষয়টি বুঝতে পেরে তরুণীর পরিবার আর এ বিয়ের ব্যাপারে এগোয়নি। মেয়েটির বাবা কচির সঙ্গে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রেমের ফাঁদ পাতে কচি। একপর্যায়ে তরুণীকে বশে আনে। এরই একপর্যায়ে অপহরণ করে মেয়েটিকে। র্যাব জানায়, গত ২৮শে এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে তরুণীটি তার বাসা থেকে ভার্সিটিতে যাচ্ছিলেন। এ সময় পথিমধ্যে কচি একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেট কার নিয়ে তার সামনে হাজির হয়। এরপর তাকে ফুসলিয়ে প্রাইভেটকারে তোলে। এরপর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। বন্দি করে ফেলে মেয়েটিকে। তার ওপর চালায় অমানবিক নির্যাতন। সেই নির্যাতন সইতে না পেরে আহাজারি করে। কান্নাকাটি করতে থাকে। একপর্যায়ে তরুণীর পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে মেয়েটির আহাজারি শোনায়। ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। দাবিকৃত টাকা ব্যাংক বা বিকাশের মাধ্যমে পাঠাতে বলে। অন্যথায় গুলি করে তরুণীকে হত্যা করার হুমকি দেয়। উদ্ধারকৃত তরুণীর বরাত দিয়ে র্যাব আরো জানায়, অপহরণের পরদিন ২৯শে এপ্রিল কচি তাকে কক্সবাজারে নিয়ে যায়। পরদিন ৩০শে এপ্রিল সকালে তাকে আবারো ঢাকায় ফিরিয়ে আনে। আটক রেখে তার ওপর আবারো নির্যাতন চালায়। তার মাথার চুল কেটে দয়ে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো ব্লেড দিয়ে কেটে রক্তাক্ত জখম করে। স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এতে মেয়েটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে বাসায় চিকিৎসক ডেকে আনে কচি। মেয়েটি এতটাই জখম হয় যে, বেশ কয়েক জায়গায় সেলাই করাতে হয়। কচির মা এ ঘটনা জানার পর তরুণীকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার উদ্যোগও নিয়েছিলেন। পরে সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে র্যাব-১ সদস্যরা তরুণীকে উদ্ধার করে। আটক করে বিকৃত রুচির কচিকে। কচির মা নিজেও এ ঘটনার জন্য তার ছেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। কচি জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। র্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আকরামুল হাসান বলেন, সম্প্রতি লন্ডন থেকে ফেরার পর কচির ‘আচরণগত সমস্যার’ কারণে বিয়ে ভেঙে দিয়েছিল পাত্রীপক্ষ। এরপর থেকে কচি নানাভাবে ওই তরুণীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল বলে তার পরিবারের অভিযোগ।
মুক্তিপণ দাবি করার পর ওই তরুণীর বাবা তখন ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সেই সঙ্গে র্যাবকেও জানান। এরপর র্যাব ওই তরুণীকে উদ্ধারে অভিযানে নামে। হাসান বলেন, কলাবাগান লেক সার্কাসে কচির বড় ভাইয়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার ও তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। র্যাব কর্মকর্তা হাসান বলেন, কচির আচরণে তার মাও ক্ষুব্ধ। তারাও ছেলের বিচার দাবি করেছেন। কচির বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় একটি অপহরণ মামলা হয়েছে। কচি কী কারণে ওই তরুণীকে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করেছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তা হাসান।