‘আইডেনটিটি অব সেল্ফ’ -এর মধ্যে বা সত্তার ভিতরেই যদি আমরা নারী বা পুরুষ ক্লেইম করি তাইলে একটা ভায়োলেন্স ফেনোমেনা পয়দা হয় ইন্টার্নালি।
এইটা পুরুষের বেলায় হয় বেশ আধিপত্যমূলক আর নারীর বেলায় হয় মালটি-ডাইমেনশনাল। নারীর আধিপত্যের ধরণ কে ইদানিং কালে তাত্বিকরা ‘ফেমিনিন মাসকুলিনিটি’ -বলে শনাক্ত করে থাকেন।
অন্যদিকে নারীবাদের বেসিক দার্শনিক সমস্যা হল, গোটা ডিসিপ্লিনে বায়োলজিক্যাল কন্ডিশন বা কখনও কখনও পারভারশনকে ‘এবসুলিট’ ধরে নেয়া হয়। বায়োলজির আলোচনা জরুরী অন্য কারণে, কিন্তু এর মানুষের মৌল সত্তার এপিসটিক বা জ্ঞানতাত্বিক পাটাতন নিয়ে পদ্ধতীগত মিমংসা বাদ রেখে নারীবাদ কোন কাজের কাজ করতে পারবে না। পারেও নাই।
উপরের এই কথাটুকু যদি আমরা আমলে নিতে পারি তাইলে হাল-ফ্যাশনের নারীবাদি আন্দোলনের ধরণ বা তরিকার রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক তাৎতপর্য বুঝতে সুবিধা হবে।
নারী আন্দোলনে পুরুষকে বাইনারীক্যালি আপজিশন ধরা হয়। ধরেই নেয়া হয় ‘পুরুষ’ মানেই নিপিড়িক, ধর্ষকামী। ভেজিনা অরিয়র। অন্য দিকে যে ‘নারী’ সে অধপতিত। তার যৌনতা, তার শরীর এমন একটা প্রতিবন্ধকতা যে- বাইরের সমজে তারে কেবল মাংসের পুটুলি মনে করা হয়। আর এইসব ঘিরে তার যে আন্দোলন এটা হল আসলে এই মাংসের থলি রক্ষার আন্দোলন। এর সাথে যুক্ত হচ্ছে আবার কর্পোরেট বাণিজ্যের যৌনমুদি ব্যাক্তির আলাদা স্বীকৃতির রাজনীতি। সে নারী কে বলে আরও নারীগিরি শো করো। তোমার রুপ- জেল্লা দিয়া গোটা সমাজ মাত কর। তোমারে পাওয়ার জন্য পুরুষের মনটা যেন লালাময় হয়ে থাকে সব সময়। ফলে এই ভেল্কির মধ্যে থেকে আধুনিক নারী আন্দোলন যেটা চায় তাঁর অর্থ হল, সে তার শরীরের ন্যায্য দাম চায়। তুমি আমার নারীত্বের সমজদার হবা। গোপনে গোপনে আমার ফেমিনিটি, আমার যৌনতার জন্য কাঙ্গালপনা পোষে রাখবা। বাট বিনা মূল্যে ফাও আমারে পাইতে চাইলে ‘নারী’ অধিকার লঙ্ঘন হয়া যাবে–এটাই নারী আন্দোলনের শেকড়ের কথা, অন্তত আমাদের দেশে। এনজিও নারীবাদ নারীকে নারীর জায়গায় রাখতে চায় না রাখতে চায় বাজারের দামের জায়গায়। বঙ্গিয় প্রগতীশীলতা নারীকে মাপে কাজে সমান মজুরী পাইল কি না এই গড়পড়তা বাজারি হিসেব দিয়ে (প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার এর প্রতিবদেন লেখা-লেখি দেখলেই বুঝবেন) । টেকনোলজি ও খোলা বাজার কালে পুরুষের সাথে এই তুলনাই অর্থহীন এখন। জেন্ডার ম্যাটার করে না। যে কেউ যে কারো চেয়ে বেশি আয় করতে পারেন। কমও করতে পারেন। তার জন্য লিঙ্গবাদি জায়গা থেকে আলোচনা অর্থহীন।
অন্য দিকে পুরুষ যেহেতু গোটা অর্থ ব্যাবস্থার এবং ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে ভেরি ম্যাসকুলিন ভূমিকা নিয়ে হাজির থাকে সেও নারীকে ‘নারী’ আকারে রেখে বেশ প্রগতীশীল হয়ে ওঠে। এই সব তথাকথিত নারীবাদি পুরুষরা মূলত ধর্ষনের সংস্কৃতির জনক- এর ভূমিকা পালন করে।
লেখক -রেজাউল করিম রনি
[
Leave a Reply