হাজারীবাগের সব ট্যানারি অবিলম্বে বন্ধ হচ্ছে
১ min read
নতুন আলো নিউজ ডেস্ক:
রাজধানীর হাজারীবাগে থাকা ট্যানারি কারখানাগুলো অবিলম্বে বন্ধ করতে এবং বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ট্যানারি মালিকের করা এক আবেদন আজ রোববার খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ওই আবেদন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শেখ ফজলে নূর তাপস। হাইকোর্টে আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, আপিল বিভাগের এ আদেশের ফলে ট্যানারি কারখানাগুলো অবিলম্বে বন্ধ করা হবে।
৬ মার্চ হাজারীবাগে থাকা চলমান সব ট্যানারি কারখানা অবিলম্বে বন্ধ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আইন অনুসারে এসব কারখানার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগসহ সেবা বিচ্ছিন্ন করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে ৯ মার্চ আবেদন করেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যারার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান। সেদিন চেম্বার বিচারপতি স্থগিতাদেশ না দিয়ে আবেদনটি ১২ মার্চ আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।
১৯৯৪ সালে বেলার করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০১ সালে ‘লাল’ শ্রেণিভুক্ত সব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে এক বছরের মধ্যে পরিবেশদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। এ আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় বেলার করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২৩ জুন হাইকোর্ট এক আদেশে ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাজারীবাগ ট্যানারি শিল্প অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের জন্য সরকার পক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
বেলার তথ্য অনুসারে, আদালত সর্বশেষ ২০১০ সালের ৩০ অক্টোবর ৬ মাসের জন্য সময় বর্ধিত করেন। পরবর্তী সময়ে শিল্প মন্ত্রণালয় আরও দুবার ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের নির্মাণ সময় বাড়ানোর আবেদন করলেও আদালত সময় বাড়ানোর কোনো নির্দেশ দেননি।
এরপরও হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি না সরায় এক আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৬ জুন হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চ সাভারে না সরানো পর্যন্ত ১৫৪টি ট্যানারি শিল্পকারখানার মালিকদের প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই অর্থ ঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে কি না, সময়-সময়ে তা তদারকি করে শিল্পসচিবকে নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়। এর বিরুদ্ধে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন আপিল বিভাগে আবেদন করলে গত ১৮ জুলাই আপিল বিভাগ হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি না সরানো পর্যন্ত মালিকদের রোজ ১০ হাজার টাকা করে জমা দিতে বলেন।
হাজারীবাগ ট্যানারিতে কাঁচা চামড়া প্রস্তুত করার যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেওয়া চলছে। ছবিটি সম্প্রতি ঢাকা হাইড অ্যান্ড স্কিন্স লিমিটেডের সামনে থেকে তোলা। ছবি: জাহিদুল করিমএরপর ক্ষতিপূরণ আদায়ের ওই নির্দেশনা সঠিকভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে না জানিয়ে করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট শিল্পসচিবকে তলব করেন। শিল্পসচিব হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেন। আইনজীবীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ওখানে ১৫৪টি কারখানায় গত আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া পড়েছে ৩০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। শুনানি নিয়ে ২ মার্চ হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ বকেয়া ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ করতে ট্যানারি মালিকদের নির্দেশ দেন।
এর আগে হাজারীবাগ থেকে ১৫৪টি ট্যানারিকে সাভারের পরিকল্পিত চামড়াশিল্প নগরে সরিয়ে নিতে ২০০৩ সালে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। তবে নানা কারণে ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও ট্যানারি সাভারে নেওয়া শেষ করা যায়নি। গত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ট্যানারিগুলোকে সাভারে যাওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। এরপর ট্যানারি সরাতে আরও তিন মাস সময় বাড়ানো হয় বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে আসে।