বগুড়ায় কয়েকটি ফাস্ট ফুড ও চায়নিজ রেস্তোরায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে ৪০ শিক্ষার্থীকে আটক ও পরে তাদের ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় সর্বমহলে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বেশিরভাগ সংবাদপত্রে ঘটনাটি প্রকাশ না পেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি উঠে আসায় অনেকে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের এই কর্মকাণ্ডে। ফাস্টফুডের দোকানে স্কুলের শিক্ষার্থীরা কোনো কিছু খেতে পারবেন কিনা এই নিয়েও অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক প্রশ্ন তুলেছে।
বগুড়া শহরে বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসন এক অভিযান চালিয়ে ৪০ জন কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীকে আটক করে পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতাজ মহলের নেতৃত্বে আর্মড পুলিশ ব্যাটিলিয়নের সদস্যরা শহরের টাইমকার্ট, জলেশ্বরীতলার টেন-ইলেভেন, অনিয়ন, সরকারি আজিজুল হক কলেজের এলাকার হোটেল হেভেন ফোর্টে অভিযান চালায়। সেখানে স্কুল ও কলেজ ড্রেস পড়া ২০ জন ছেলে ও ২০জন মেয়েকে ওইসব স্থানে থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করে সদুত্তর দিতে না পারলে আটক করে জেলা প্রশাসন অফিস সম্মেলন কক্ষে আনা হয়। তারপর তাদের অভিভাবকদের ফোনে ডেকে নিয়ে আটককৃতদের মুক্তি দেয়া হয়।
জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা সেই দিন বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেছিলো। যে কারণে অনেক গণমাধ্যমে বিষয়টি আসেনি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিসহ খবরটি প্রচার করা হয়েছে। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বগুড়া জেলা প্রশাসন তথা জেলা প্রশাসক ও পুলিশকে তুলোধুনো করা হয়েছে। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন নৈতিক শিক্ষা না দিয়ে এভাবে এসব কিশোর কিশোরীদের হেনস্থা প্রশাসন করতে পারে না। যদি এসব কিশোরীরা আপত্তিকর অবস্থায় না থাকে তাহলে ফাস্ট ফুডের দোকান থেকে তাদের আনাই উচিত হয়নি।
সেলিম রেজা নিউটন নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘উনি একজন বিকৃতমনা জেলা প্রশাসক। অন্যকে হয়রানি করায় উনার আনন্দ। উনার মনোচিকিত্সা দরকার। সাতান্ন ধারা, বত্রিশ ধারা মনে রেখেই বলছি। এটুকু আমাকে বলতেই হবে।’’
নিতান্তই দুশ্চিন্তার কিছু হলে রেস্টুরেন্টগুলোর মালিকদেরকে নিষেধ করে কঠোর ব্যবস্থা নিলেই হতো। বাচ্চা মেয়েগুলোকে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সম্মেলন-কক্ষে নিয়ে আর কী হয়রানি করা হয়েছে, সেটা তদন্ত করা দরকার। একটা জেলার আর্মড পুলিশের কি এই কাজই কর্তব্য? বাচ্চাদের যদি কোনো দোষও থাকে, তাঁদের বিরুদ্ধে এটা রীতিমতো মনঃস্তাত্ত্বিক আগ্রাসন। তাঁদের মা-বাবাদেরকে এ এক প্রকার ব্ল্যাকমেইলিং করা বটে, মারাত্মক হেনস্তা করাও বটে। বগুড়ায় আরো কোনো সিরিয়াস অপরাধ খুঁজে পাচ্ছেন না, এই জেলা-জমিদার বাহাদুর? বাংলাদেশ রাষ্ট্র সামাজিক পরিসরেও কি পুলিশগিরি করবে? আমাদের পুলিশ কি ইরান, সৌদি আরবের মতো “থট পুলিশ” হয়ে গেল?
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বগুড়ার সভাপতি মাছুদার রহমান হেলাল বলেন, বগুড়া শহর ও শহরতলিতে কিছুদিন ধরেই কতিপয় ফাস্ট-ফুডের দোকান ও চায়নিজ রেস্তারায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বসে আড্ডা দেয় বলে আমরা জেনেছি। বিশেষ করে স্কুল কলেজ চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা এ্সব দোকানে আড্ডা দেয়া দিয়ে থাকে। জেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। কিন্তু ঢালাও ভাবে অভিযান চালানো টিক হবেনা। যেসব ফাস্ট ফুডের দোকানে কেবিন সিস্টেম করে বসার ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলো জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ভেঙে ফেলা উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, জেলা প্রশাসন যেভাবে অভিযান চালিয়ে এসব ছেলেমেয়েদের আটক করেছে এভাবে না করলেও পারতো। রেস্টুরেন্ট থাকলেই সেখানে খারাপ কিছু হবে সেটা বলা যাবেনা। এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অভিভাবক ও ফাস্টফুডের দোকান মালিকদের নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
এ ব্যাপারে বগুড়া জেলা প্রশাসক নুরে আলম সিদ্দিকীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা তিনি বলেন, স্কুল-কলেজ আওয়ারে শিক্ষার্থীরা ড্রেস পরে ক্লাস বাদ দিয়ে রেস্টুরেন্ট বা ফাস্ট ফুডের দোকানে আড্ডা দেয়ায় তাদের ডেকে আনা হয়েছিল। তাদের উপর জোর জবরদস্তি করা হয়নি। তাদের ভবিষ্যত জীবনের কথা চিন্তা করে তাদের বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। তারা ভবিষ্যতে স্কুল-কলেজ বাদ দিয়ে ড্রেস পড়ে আর দোকানে আসবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যাদের ডেকে আনা হয়েছিল তারা সবাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ড্রেস পড়ে ছিল। তাদের ব্যাপারে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
Leave a Reply