বর্তমান অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন বিএনপি গ্রহণ করবে না বলে সাফ জানিয়ে দলটির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনেও বিএনপি যেতে চেয়েছিল কিন্তু সরকার ও নির্বাচন কমিশন যে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারেনি সেটি সেই সময়ে অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণিত হয়েছে। এখনও বলি বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তাঁর সাথে আলোচনা করেন, তাহলে দেশে সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে এটা যদি ভেবে থাকেন তাহলে আপনাদেরকে (সরকার) পাগল ছাড়া কিছুই ভাববো না।’
বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত ‘বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণের শর্ত জানিয়ে দলটির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মধ্যে যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনে বিএনপি যাবে কিন্তু পরিষ্কার কথা হচ্ছে- শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন আমরা গ্রহণ করবো না। বর্তমান যে নির্বাচন কমিশন তিনি এক সময় চাকরি হারিয়েছিলেন, আর এখন শেখ হাসিনা তাকে নিয়ে এসেছেন তাঁর উপকারের জন্য। তিনি নিজেও (নির্বাচন কমিশন) বলেছেন- দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি দিতে পারবে না।’
দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং ২০ দলের দাবি মেনে নেয়া- এমন মন্তব্য করে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে; এই নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে আর এটির জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে।’
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি আরও বলেন, ‘আমরা শুধু আন্দোলন করবো নির্বাচনে যাবো না, এটা ঠিক না। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন গ্যারান্টি পেলে আমরা নির্বাচনে যাবো। আর সেই সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং ২০ দলের দাবি মেনে নেয়া সেই সাথে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা।’
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা নাকি দেশে উন্নয়নের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। তিনি নাকি কত কিছু করেছে। আমরা বলি- দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনই একটি দলের সাফল্য কতটুকু তা প্রমাণ হয়। দেশের সব রাজনৈতিক দল একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেজন্য সবাই রাজপথে নামার উদ্যোগ নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকার যদি সিদ্ধান্ত না নেয় তাহলে তারা ভুল করবে।’
বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সরকারের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া ভীষণ ভাবে অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসার জন্য সরকার গঠিত যে বোর্ড তাদের মধ্যে ৩ জনই আওয়ামী লীগের। তারাও বলেছে খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ, অবিলম্বে তাঁকে হাসপাতোলে স্থানান্তর করতে হবে। আমাদের সিনিয়র নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করে দাবি জানিয়ে ছিল বেগম খালেদা জিয়ার পছন্দ মতো ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করার পরেও দুঃখের বিষয় হলো সরকার যে বোর্ড করেছে তাতে বিএনপির আবেদন, খালেদা জিয়ার আবেদন সরকার অগ্রাহ্য করেছে। তারপরেও এই বোর্ড সুপারিশ করেছে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে স্থানান্তর করার জন্য, সেটাও করা হয় নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার এত নির্মম যে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত হয়েছেন। তাকে শুধু মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক করে রাখা হয়নি- তাঁর সুচিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে না। তাই এই সরকারকে বলব এই দিন দিন নয়, আরও দিন আছে, এই দিনই নিয়ে যাবে সেই দিনের কাছে।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক গোলাম সরোয়ারের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কামরুদ্দীন এহিয়া খান মজলিস সারোয়ার, জাগপার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আজাদ, জিনাফের সভাপতি লায়ন মিয়া মো. আনোয়ার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
Leave a Reply