নিজস্ব প্রতিনিধি :: বিশ্বনাথের রামপাশা ইউনিয়নে মাদক মামলায় এক নারীর আটকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পাটাকইন গ্রাম। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের ৮টি গ্রাামের মধ্যে এখন অশান্তি বিরাজ করছে।
জানাগেছে, গেলো মাসের ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বনাথের রামপাশা ইউপির পাটাকইন গ্রামের মৃত আলকাছ আলীর পুত্র তবাকের স্ত্রী চুনারুঘাটে মাদক আটকের ঘটনায় হবিগঞ্জের ডিবি পুলিশের মামলায় বর্তমানে কারাগারে। একই মামলায় অভিযুক্ত করা হয় তবারক আলীকেও। এর পর থেকে তবারক আলী গা’ঢাকা দেয়। কেউ কেউ বলছেন তবারক সিলেটে সীমান্ত এলাকা দিয়ে দেশ ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এদিকে তবারকের স্ত্রী কারাগারে থাকা এবং তবারক পালিয়ে থাকার পর গেলো ২ মার্চ সিলেটের দুটি প্রেসক্লাবে তবারক আলীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন তবারক আলীর মা নুরজাহান বিবি। লিখিত বক্তব্যে তিনি পার্শ্ববর্তী পাঁচকড়ি গ্রামের মনোহর আলীর ছেলে সিরাজ মিয়ার নাম উল্লেখ করেন। সিরাজ মিয়াকে প্রভাবশালী উল্লেখ করে তবারক আলীর বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করার ও অভিযোগ করা হয়।বর্তমানে তবারক আলী নিখোঁজ বলেও সংবাদ সম্মেলনে দাবী করেন নুরজাহান বিবি।
তবে বিষয়টি মানতে নারাজ পাটাকইন গ্রামের আবদুল গণি (৪৫) কাজী হাবিবুর রহমান (৫০),সুনু মিয়া(৪৫),মনোহরপুরের আয়াজ আলী (৫০) পালের চক গ্রামের হাবিবুর রহমান (৪৫) রামপাশা গ্রামের রিপন রাজ(৩৫) রামচন্দ্র পুরের লিয়াকত (৪২) শ্রীপুরের কাঁচা মিয়া ও রামপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার খাঁ ও দোহাল গ্রামের মাস্টার আতিকুর রহমান প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে নুরজাহান বিবির বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে তারা বলেন, তবারক আলী নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। থানা পুলিশেও পরিবারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে জিডি করা হয়নি। তবে তবারকের উপর ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে মামলা হওয়ার বিষয়টি তারা জেনেছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। তবে সিরাজ মিয়ার উপর নুরজাহান বিবির দায়ের করা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি তাদের।
মনোহরপুরের আয়াজ আলী বলেন, একই ইউনিয়ন হলেও তবারক এবং সিরাজ মিয়ার গ্রাম ভিন্ন। তাছাড়া, সিরাজ মিয়া কোনোদিনই স্কুল কমিটির নির্বাচনে অংশ নেননি। এই অবস্থায় স্কুলের পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে সিরাজ মিয়ার পরাজয় বিষয়টি খুবই হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গ্রামবাসী জানান, তবারক আলী বর্তমানে গ্রেফতার এড়াতে পলাতক রয়েছেন। এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে একটি চক্র কুটবুদ্ধির আশ্রয় গ্রহণ করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চালাচ্ছে।
পাটাকইন গ্রামের সুনু মিয়া জানান, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশাপাশের ৮টি গ্রামে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। নুরজাহান বিবির অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, সিরাজ মিয়ার পরিবার সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। এলাকার বিভিন্ন স্কুল, মসজিদ ও মাদরাসায় এই পরিবারের বড় রকমের অনুদান থাকে। একটি অশুভচক্র বর্তমানে গ্রামের শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্ন করতে উঠে পড়ে লেগেছে।
রামপাশা গ্রামের আবদুল কাইয়ুম বলেন, তবারক আলী ও তাঁর বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ শুনেছি। বর্তমানে তবারক আলীর স্ত্রী মাদকের একটি মামলায় জেল হাজতে রয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে সিরাজ মিয়া বলেন, এই বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। কারণ তবারক আলীর বিরুদ্ধে আমার কোনো মামলাও নেই। শুনেছি মাদকের একটি মামলায় তবারকের স্ত্রী জেলহাজতে রয়েছে। তিনি বলেন, তবারক আমার পার্শ্ববর্তী গ্রামের প্রতিবেশি।
নুরজাহান বিবির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এলাকাবাসির কাছ থেকে আমি এবং আমার পরিবার বিষয়ে আপনারা জানতে পারবেন। এই ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে তবারক আলীর বক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে, অহেতুক ঘটনার প্রেক্ষিতে গ্রামের শান্তি শৃঙ্খলা যাতে বিঘ্নিত না হয়- সেদিকে আইনানুগ কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ৮ গ্রামের একাধিক বাসিন্দা।