নতুন আলো নিউজ ডেস্ক :বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। দুদক রাতকানা বাদুড়ের মতো। দুদককে দায়িত্বই দেয়া হয়েছে বিএনপি নেত্রী ও নেতাদের বিরুদ্ধে খক্ষ চালিয়ে যাওয়ার জন্য।
বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত প্রমুখ।
রিজভী বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা মন্ত্রিত্ব করছেন, তখন তার (দুদক) চোখ কানা হয়ে থাকে। দু’জন মন্ত্রী সাজাপ্রাপ্ত। লুট হচ্ছে সারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অর্থ। অথচ তারা (দুদক) রাতকানা বাদুড়ের মতো আচরণ করছে। যেই স্বচ্ছতা তার দেখানোর কথা তিনি তা দেখাতে পারেননি।’
দুদক চেয়ারম্যানের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘যে অন্ধ সে কখনও স্বচ্ছতা দেখাতে পারবে না। কারণ এভাবেই তাকে (দুদক) করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের যে অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি, যে কলঙ্ক, এত কিছু! বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, পদ্মা সেতু নিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে নানা প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করেছে, তখন নির্লিপ্ত থেকেছে এই দুদক।’
রোববার দুদক খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধির জন্য আবেদন করবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দুদকের চেয়ারম্যান দলীয় এজেন্ডা নিয়ে এখানে কাজ করছেন। প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনা কোনো বিবেকবান মানুষকে রাখবেন, এটা কি ভাবা যায়?’
হাইকোর্টের দেয়া খালেদা জিয়ার চার মাসের জামিন নিয়ে সরকার ছিনিমিনি খেলছে বলে অভিযোগ করেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন স্থগিতে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।’ তার এই বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে- ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাইনি’র মতো ঘটনা। অর্থাৎ খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতে সরকার হস্তক্ষেপ করেছে এটা সরাসরি বোঝা যায়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা রাজনৈতিক। নিম্ন আদালতের দেয়া সাজা রাজনৈতিক ও জামিন স্থগিতের আদেশও রাজনৈতিক। সারা দেশের জনগণ বিশ্বাস করে সব কিছুই করা হচ্ছে হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের প্রধানের ওপর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে।’
রিজভী বলেন, ‘আদালতকে শুধু প্রভাবিত নয়, সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রশ্ন করতে চাই- কীভাবে তিনি বললেন খালেদা জিয়া কারাগার থেকে মুক্ত হতে পারবেন না? উচ্চ আদালত যদি স্বাধীন হয়, সাংবিধানিকভাবে যদি তাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকে তাহলে অ্যাটর্নি জেনারেল কীভাবে বললেন? তিনি তো সরকারের লোক। এটা থেকে সুস্পষ্ট সরকার খালেদা জিয়াকে আটকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।’
রিজভী অভিযোগ করেন, ‘সরকার যেন মুক্তিপণ আদায় করার জন্য খালেদা জিয়াকে বন্দি করে এক স্যাঁতসেঁতে পরিত্যক্ত কারাগারে আটকিয়ে রেখেছেন। এটি করেছেন একতরফা নির্বাচন বিপদমুক্ত করতে। বিএনপি চেয়ারপারসনকে নির্বাচনের বাইরে রাখার জন্যই সরকার ষড়যন্ত্র করছে। অর্থাৎ আপনি নির্বাচন করতে পারবেন না, আমি একতরফা নির্বাচন করব। এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে। যতদিন আপনি মেনে না নেবেন ততদিন আপনি কারাগারে থাকবেন। এটাতে মনে হচ্ছে সরকার মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টায় লিপ্ত আছে। খালেদা জিয়ার ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করে লাভ হবে না। আগামী নির্বাচন দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই বিএনপি অংশগ্রহণ করবে।’
যশোরের অভয়নগরের ফরাজী মতিয়ার, কাজী গোলাম হায়দার ডাবলু, গিয়াস হোসেন, হাবিবুর রহমান হাবিবসহ ২৭ নেতাকর্মী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নিম্ন আদালতে হাজির হলে তাদের কারাগারে প্রেরণের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন রিজভী।
Leave a Reply