জগন্নাথপুর প্রতিনিধি::জগন্নাথপুর উপজেলা সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নে ২নং ওয়ার্ডে হাড়িকোনা পাড়ায় সরকারি অর্থায়নে স্বাধীনতা বিরুধী রাজাকার মরহুম সৈয়দ আনোয়ার আলী ও তার ছোট ভাই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি সৈয়দ মনোয়ার আলীর সরকারের অর্থায়নে বাড়িতে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষথেকে এ প্রকল্প নেয়ায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার আলির বড় ভাই আনোয়ার আলী ছিলেন স্বাধীনতা বিরোধী এবং রাজাকারের তালিকায় তার নামও রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সরকারি অর্থায়নে স্বাধীনতাবিরোধী ও আওয়ামীলীগ নেতার একক ব্যক্তির বাড়ির জন্য সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করা হয়।
ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে সেতু নির্মাণের দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে কার্যাদেশ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সুনামগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেজাউল আলম গত ২ জুলাই লটারির মাধ্যমে সেতুটির কাজ পেয়েছেন।
এলাকাবাসী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গত রোববার দায়ের করা লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের হাড়িকোনা গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার আলী তার নিজ বাড়ির জন্য একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। মনোয়ার আলীর ভাই আনোয়ার আলী ৭১ সালে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার হিসেবে পরিচিত। জগন্নাথপুর উপজেলার রাজাকারের তালিকায় তার নামও রয়েছে।
এলাকাবাসীর তীব্র ক্ষোভ দেখে লিখত অভিযোগ করেন হাড়িকোনার বাসিন্দা মসুদ কোরেশি। মোঃ মসুদ কোরেশী বলেন, সরকারি অর্থে এক ব্যক্তির বাড়ির জন্য সেতু নির্মাণের বিষয়টি এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও আওয়ামী সরকার যখন ক্ষমতায় তখন রাজাকারের বাড়িতে সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি খুবই নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। তাই আমি সেতু নির্মাণ কার্যক্রম বাতিলের দাবি জানিয়ে লিখিত আবেদন করেছি।
জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরে জগন্নাথপুর উপজেলায় ১০ টি সেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। গত ২ জুলাই লটারির মাধ্যমে সেতুগুলোর ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। ১০ টি সেতুর মধ্যে সৈয়দপুর হাড়িকোনা সৈয়দ মনোয়ার আলীর বাড়ির সেতুর জন্যে ২১ লাখ ১৭ হাজার ৯৯১ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২৪ ফুট দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার সৈয়দ এমদাদ মিয়া বলেন, সরকারি অর্থে এক ব্যক্তির বাড়ির জন্য সেতু নির্মাণ কেউ মানতে পারছেন না। এনিয়ে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্বকরতে যারা সরকারি অর্থায়নে ব্যক্তির বাড়িতে সেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছেন তারা কাজটি সঠিক করেননি। দ্রুত এ সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করে জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেতু নির্মাণ করা হউক। তিনি বলেন যে ব্যক্তির জন্য সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে তার ভাই স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। আগামীতে আওয়ামী লীগের যেকোনো সভায় আমরাও এ দাবি তুলে ধরব।
সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার আলী বলেন, আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কেরিয়ারের দলের কাছে স্বাভাবিক কিছু আশা করতে পারি, কিন্তু আমার প্রতিপক্ষরা আমার বাড়ির সামনে সেতু নির্মান না হওয়ার জন্য বিরোধিতা করছে। তিনি বলেন, আমি গত ২০ বছর ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। আমার ঘুষ্টি বা আত্বীয়স্বজন সবাই আওয়ামীলীগ সমর্থক। প্রতিটি নির্বাচনে আমি নিজেই এজেন্ট থাকি। গত ছয় বছর ধরে একটি সেতুর জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলাম। সেতুটি বাস্তবায়ন হলে আমি ও আমার পরিবার উপকৃত হবে। তিনি আরো বলেন, আমার ভাই আনোয়ার আলী যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছিলেন। স্বাধীনতার সময় কৌশলে রাজাকারের পক্ষে থেকে দেশের হয়ে রাজাকারকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন, এর জন্যে তাকে রাজাকার বলা যায় না। অহেতুক তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছন একপক্ষীয় চক্র। এবং আমার ভাই যুক্তরাজ্য বসবাসকালে সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়।
জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রণয়ন কমিটির সুপারিশক্রমে আমরা সেতুগুলো চূড়ান্ত তালিকাভূক্ত করি। সরেজমিনে পরিদর্শন করে এক বাড়ির জন্য যদি প্রতীয়মান হয় তাহলে তা আমরা বাতিলের সুপারিশ করব। তিনি বলেন ঠিকাদার কে এখনো কার্যাদেশ দেয়া হয়নি।
উপজেলা প্রকল্প প্রণয়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুল আলম মাসুম বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষে এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন, রাজাকারের পরিবার কিনা সেটা বড় কথা নয়। জনস্বার্থ আছে কিনা সেটা দেখা হবে।