কক্সবাজার প্রতিনিধি:: পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার ৫২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৭০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন । ইতিমধ্যে পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দী মানুষের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ শুরু হয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মো. মোতাছেম বিল্যাহ জানান ভারী বর্ষণে ও খালের পাড় ভেঙে পাহাড়ি ঢল ঢুকে উপজেলার ৫২টি গ্রাম প্লাবিত মানুষ পানিবন্দী। এলাকাবাসী কে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে প্লাবিত এলাকায় মাইকিং চলছে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্লাবিত এলাকার ১ হাজার ৪০০ পরিবারে চাল ও শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার আরও দুই হাজার পরিবারে এসব খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
আজ সকালের দিকে সরেজমিনে দেখা যায় চকরিয়ার বরইতলী-পেকুয়া সড়কের পহরচাঁদা মাদ্রাসা থেকে হাজিরঘোনা সেতু পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় কোমর পানি। সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। মানুষ নৌকা ও ভ্যানে চড়ে চলাচল করছে। সাঁকোরপাড় স্টেশনের সব দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে। মাতামুহুরীর শাখা খালের সাঁকোরপাড় অংশের দুই পাশে ভেঙে গেছে। খালের পানি মানুষের বসত ঘরে ঢুকে পড়েছে।
পেকুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ জানান উত্তর মেহেরনামা এলাকায় সাঁকোরপাড় স্টেশন–সংলগ্ন দুটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে পেকুয়া সদর ও শিলখালী ইউনিয়নে পানি ঢুকে পড়ছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা অনেক চেষ্টা করেও ভাঙন রোধ করতে পারেননি। মানুষের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
শিলখালী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হোসেন জানান শিলখালী ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামের ঘরবাড়ি প্লাবিত গেছে। পানিবন্দী হয়েছে পড়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এ ছাড়া অতিবর্ষণের ফলে কয়েকটি স্থানে পাহাড় ধসে পড়ার শঙ্কাও রয়েছে। সেই এলাকার লোকজনদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি বিত্তবানদের পানিবন্দী মানুষের দাঁড়ানোর আহবান করেন।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল, নদীর পাড় ভেঙে শিলখালী ইউনিয়নের ১৮টি গ্রাম, বারবাকিয়া ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম, টৈটং ইউনিয়নের ৪টি গ্রাম, উজানটিয়া ইউনিয়নের ৫টি গ্রাম ও মগনামা ইউনিয়নের ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যে রাজাখালীর কোনো গ্রামে এখন পর্যন্ত পানি ঢোকেনি।
মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী জানান এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে মগনামার সব গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাবে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, প্লাবিত এলাকার মানুষজনের মধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।
ইউএনও মো. মোতাছেম বিল্যাহ জানান পেকুয়ার সব কটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। অনেক পরিবার ইতিমধ্যেই আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছেন। কিছু কিছু স্থানে গবাদিপশু আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ টন চাল ও ১০০ বস্তা শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।