ডেস্ক রিপোর্ট::সিলেটের এমসি কলেজের শতবর্ষী ছাত্রাবাসে গত বছরের ২৫শে সেপ্টেম্বর বেড়াতে যাওয়া স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছিল ৮ ছাত্রলীগ কর্মী। এ ঘটনায় সিলেটজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। পরে র্যাব ও সিলেট জেলা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩ দিনের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর ৮ আসামি সাইফুর রহমান, শাহ মো মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান মাসুম, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিজবাউল ইসলাম রাজন আদালতে ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।
ধর্ষণের ঘটনার পর সারা দেশে প্রতিবাদ- আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবাদের মুখে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে আইন পরিবর্তন করা হয়।
ধর্ষণের ঘটনার পরদিন ভক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে নগরের শাহপরান থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। এ ছাড়া ওই রাতে ছাত্রাবাস থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা করে পুলিশ। ঘটনার পর আসামিরা পালিয়ে গেলেও তিন দিনের মধ্যে ছয় আসামি ও সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও র্যাব। গ্রেপ্তারের পর তাদের পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। পরবর্তী সময়ে সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেন। আসামিদের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষায় আট জনের মধ্যে ছয় জনের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়।
মামলার অভিযোগপত্রে ঘটনার পর আসামিদের পালিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন পর্যায় প্রত্যক্ষ করা দুজনসহ ৫২ জনকে সাক্ষী রাখা হয়।
২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে ঘটেছিল এমন ঘটনা। সেই ন্যাক্কারজনক ঘটনার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। নানা জটিলতা আর আইনি মারপ্যাচে এক বছরেও শুরু হয়নি দেশ-বিদেশে আলোড়ন তোলা এই ঘটনার বিচার।
এক বছরেও বিচার শুরু না হওয়ায় হতাশা জানিয়েছে মামলার বাদী। তবে আইনজীবীরা বলছেন, করোনার কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এই মামলার কার্যক্রমে গতি পায়নি। সম্প্রতি মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালে স্থানান্তর করে গেজেট প্রকাশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এবার দ্রুত এই মামলার বিচার শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
গত বছরের ২২ নভেম্বর অস্ত্র ও চাঁদাবাজি মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এরপর ধর্ষণ মামলায় গত বছরের ৩ ডিসেম্বর ৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোহিতুল হক চৌধুরী মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার কাজ শুরু করেন। অভিযোগ গঠনের পর ২৭ জানুয়ারি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছিল আদালত। তবে ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির দুটি মামলা একসঙ্গে একই আদালতে চালানোর জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করে বাদীপক্ষ।
এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল বেঞ্চ মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম একসঙ্গে একই আদালতে সম্পন্নের আদেশ দেন।
এর মধ্যে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্নের লক্ষ্যে মামলাটির দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তেরর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে গেজেট প্রকাশ করে।
এরপরই করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় আদালতের কার্যক্রম। ফলে এখন পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেজেটের কপি আদালতে এসে পৌঁছায়নি।
আদালতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের গেজেটের কপি পৌঁছলে নতুন করে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।