সিলেট প্রতিনিধি:: সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা সংবলিত বিশেষায়িত একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি অব্যবহৃত অবস্থায় পরে আছে। এই বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্সটির গ্যারেজেও জায়গা হয়নি, প্রায় এক বছর ধরে আছে খোলা আকাশের নিচে।
বৃহস্পতিবার দেড় কোটি টাকা দামের অ্যাম্বুলেন্সটি সরিয়ে হাসপাতালের দুটি অচল গাড়ির পাশে নিয়ে রাখা হয়েছে। এখানেও নেই কোনো ছাউনি ।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রাঙ্গণের এক কোণে সারিবদ্ধ গাড়ি। এর মধ্যে দুটি অ্যাম্বুলেন্স একেবারেই অচল। খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় সেগুলোতে জংগার ধরেছে। তার পাশেই রাখা হয় আইসিইউ সুবিধা সংবলিত অ্যাম্বুলেন্সটি। আগে প্রশাসনিক দপ্তরের একটি কক্ষের পাশে খোলা আকাশের নিচে ছিল এটি। সেখানে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় এই স্থানান্তরের ঘটনা ঘটে। আর তাতেই নতুন করে নজরে আসে অ্যাম্বুলেন্সটি, অযত্ন অবহেলায় রাখা হয়েছে।
হাসপাতালের একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক বলেন, ‘এটি সবচেয়ে দামি অ্যাম্বুলেন্স। এই অ্যাম্বুলেন্স চালাইবার শক্তি আমাদের নাই। তাই এক বছর ধরে অচলাবস্থায় পরে আছে।
হাসপাতালের যান পরিচালন শাখা সূত্রে জানা গেছে, অ্যাম্বুলেন্সটি গত বছরের ১৭ অক্টোবর বরাদ্দ দেওয়া হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) অ্যাম্বুলেন্সটির ভেতরে উন্নত প্রযুক্তির পালস অক্সিমিটার, ইসিজি মেশিন, সিরিঞ্জ পাম্প, ভেন্টিলেটর মেশিন, সাকার মেশিন, মনিটর, অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রয়েছে। লোকবলের অভাবে এটি চালানো যায়নি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটির ডান পাশে একটি গাড়ি রাখা। সেটির গায়ে ‘স্বেচ্ছা রক্ত সংগ্রহ কার্যক্রম (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত)’ লেখা। ওই গাড়ির পাশে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স। দুটি গাড়িতে জংগার ধরছে । খোলা আকাশের নিচে রোদ–বৃষ্টিতে পড়ে থাকতে থাকতে গাড়ির রং বদলে গেছে। এ দুটি গাড়ির পাশে রাখা হয়েছে বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্সটি। রয়েছে হাসপাতালের নির্ধারিত সাতটি অ্যাম্বুলেন্স। সেগুলো অবশ্য চলাচল উপযোগী। গাড়ি গুলোর ওপরে নেই কোনো ছাউনি নেই কোন গ্যারেজ।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মচারীরা এসব গাড়ির নজরদারি করেন। দুপুর থেকে বিকেলের পালায় কর্মরত দুজন কর্মচারী বলেন, ওসমানী হাসপাতালের নিজস্ব পার্কিংয়ে মোটরসাইকেল রাখা হয়। গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহৃত হয় তিনটি কক্ষ। সেখানে কর্মকর্তাদের গাড়ি রাখা হয়। অ্যাম্বুলেন্স রাখার গ্যারেজ না থাকায় খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে।
আইসিইউ সুবিধা সংবলিত একটি অ্যাম্বুলেন্স সিলেটে আছে, এমন খবর অনেকেই জানেন না। সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় পর্যায়ে আমরা শুধু আইসিইউ শয্যা আর অক্সিজেন সাপোর্টের জন্য প্রবাসীদের সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করেছি। ঠিক এই সময়ে এক বছর ধরে একটি বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্স অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে যা আমাদের জানা নেই এটা চরম অব্যবস্তাপনার, অরাজকতার উদাহরণ।
জানতে চাইলে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনা কমিটির সদস্য ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটি একটি বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্সটি পরিচালনার জন্য দুজন চালকের পাশাপাশি একজন চিকিৎসক ও নার্স দরকার হয়। লোকবল না পাওয়ায় চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
বরাদ্দ দেওয়ার প্রায় এক বছর পরও অ্যাম্বুলেন্স চলেনি—এ বিষয়ে সহকারী পরিচালক বলেন, ‘একবারও চলেনি, কথাটা সত্য নয়। একবার চলেছে। গত মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে অ্যাম্বুলেন্সটি টুঙ্গিপাড়ায় প্রটোকলে গিয়েছিল। এরপর আর চলেনি। আমরা সম্প্রতি কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে।’