জগন্নাথপুর প্রতিনিধিঃসুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার এক গৃহবধূ কে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষন ও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে জগন্নাথপুর পৌর এলাকার যুক্তরাজ্য প্রবাসী ,ব্যবসায়ী,সাংস্কৃতিক কর্মী সহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় এবং ইতিমধ্যেই তিন জন কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার তাদের কে মৌলভীবাজার কারাগারে পাঠানো হয়েছে মামলায় অভিযুক্ত সাত জনের মধ্যে ছয়জনের বাড়ি জগন্নাথপুর পৌর এলাকার কেশবপুর গ্রামে।তারা সবাই পরস্পরের আত্বীয় বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িত ও একজনের বাড়ি সিলেটের জালালাবাদ থানার আখলিয়া নয়াবাজার দুসকী গ্রামে।
স্হানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ কোন ধরনের তদন্ত ছাড়াই যুক্তরাজ্য প্রবাসী, ব্যবসায়ী, সামাজিক ,সাংস্কৃতিক ও গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তিদের জড়িয়ে মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় তাঁরা বিস্মিত ও অবাক।
জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের অলৈইতলী গ্রামে ৩২ বছর বয়সী এক গৃহবধূ বাদী হয়ে তাকে ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন গত ২ মে । ২৬ এপ্রিল তিনি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানায় দায়েরকৃত মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে লেবু কেনা ও বেড়ানোর জন্য অভিযুক্তরা একটি মাইক্রোবাস গাড়িতে করে ওই গৃহবধূ ও তার স্বামী কে গত ২৬ এপ্রিল সেখানে নিয়ে যান । পরে স্বামীকে বিদায় করে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে এবং সিলেটের চন্ডিপুল এলাকায় দুই দফায় জোরপূর্বক ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা করেন।
ধর্ষণের অভিযুক্তরা হলেন কেশবপুর গ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী আনহার মিয়া(৪৫), তরুন ব্যবসায়ী আজহার আহমেদ (৩০), রাধারমন সমাজ কল্যান সাংস্কৃতিক পরিষদের সদস্য সাংস্কৃতিক কর্মী আছকির মিয়া (৩৭) সিলেটের জালালাবাদ থানার আখলিয়া নয়াবাজার দুসকী গ্রামের হোসেন মিয়া।
আর ধর্ষণ চেষ্টার অভিযুক্তরা হলেন
ব্যবসায়ী তোতা মিয়া (৪০), রাধারমন সমাজ কল্যাণ সাংস্কৃতিক পরিষদের কর্মী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রমজান মিয়া (৪১) ও মাইক্রোবাস চালক আলমগীর (২৫)।
তাদের মধ্যে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আনহার মিয়া ও তার মামা তোতা মিয়া কে নিজ বাড়ি থেকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করে।এর আগে সিলেট শহর থেকে হোসেন মিয়া কে গ্রেপ্তার করে শ্রীমঙ্গল নিয়ে যায় শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানা পুলিশ।
কেশবপুর গ্রামের বাসিন্দা রিপন মিয়া বলেন, মামলায় অভিযুক্ত আছকির মিয়ার ভাতিজা আলমগীর মিয়া, ভাগনা হচ্ছে আজহার মিয়া,রমজান মিয়া হলেন একজন সাংস্কৃতিক কর্মী। আনহার এবং তোতা মিয়া সম্পর্কে মামা ভাগনা।পরস্পর আত্বীয় স্বজন সংঘবদ্ধ হয়ে কোন ধর্ষণে জড়িত থাকতে পারে তা বিশ্বাসযোগ্য না, এই ধরনের মামলার পিছনে গ্রামের দুষ্কৃতীকারী একটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ বলে প্রতিয়মান।
কেশবপুর গ্রামের বাসিন্দা জগন্নাথপুর পৌর সভার বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিল’র আলাল হোসেন বলেন, অভিযুক্তরা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং বিভিন্ন পেশায় জড়িত। তিন জন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, একজন যুক্তরাজ্য প্রবাসী। তিনি দেশে বেড়াতে এসেছেন। আর একজন সাংস্কৃতিক কর্মী এবং অন্যজন গাড়ি চালিয়ে সংসার চালান। কে বা কারা কেন এ ধরনের একটি অভিযোগ করেছেন তা বুঝতে পারছি না। কাউন্সিলর আরও বলেন গ্রামের মধ্যে দুষ্কৃতীকারী একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে টাকা পয়সা দিয়ে গ্রামের সম্মানিত ভাল মানুষের উপর মিথ্যা দিয়ে মামলা করিয়ে হয়রানি করে যাচ্ছে,আমি সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে এর পিছনে জড়িতদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য দাবি জানাচ্ছি।
জগন্নাথপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাফরোজ ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই একজন প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করা এবং তাদের মানহানিকর মামলায় জড়ানো খুবই দুঃখজনক। আমরা,সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক এ ঘটনার আইনানুগ পদক্ষেপ দেখতে চাই।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোল্যা সেলিমুজ্জামান বলেন, মামলার প্রধান আসামিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মৌলভীবাজার আদালতের মাধ্যমে কারাগারের পাঠানো হয়েছে। মামলায় বিশদ তদন্ত চলছে।