চান মিয়া, ছাতক (সুনামগঞ্জ)::নাম পরিচয়হীন এক অজ্ঞাতনামা মানসিক প্রতিবন্ধির ওপর চোর সন্দেহে গাছের সঙ্গে বেধে ও মাটিতে ফেলে লাঠিপোটা এমনকি বেধরকভাবে মারপিট করে বর্বরতা চালিয়েছে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় নদী খনন কাজে থাকা ড্রেজারে কর্মরত শ্রমিকরা। বর্বর নির্যাতনের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় এ নিয়ে সমালেঅচনা ও তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ধর্মপাশা থানা পুলিশ শনিবার তদন্ত নেমেছেন।’ প্রত্যক্ষদর্শীদের সুত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় বৌলাই নদী খনন কাজে নিযুক্ত ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা সংগঠিত হয়ে নাম পরিচয়হীন ৩০ বছর বয়সী এক মানসিক প্রতিবন্ধি ব্যাক্তিকে মোবাইল চোর সন্দেহে বুধবার রাতে আটক করে রাখে।’ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড’ (পাউবো)’র আওতাধীন মেসার্স নুরুজ্জামান খান নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে বৌলাই নদীতে খনন কাজে থাকা ড্রেজারের হাউজ বোট থেকে একটি মোবাইল ফোন সেট চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এমন সন্দেহের জের ধরে পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে বোট থেকে ওই ব্যাক্তিকে নামিয়ে এনে উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উওর ইউনিয়নের সুখাইড় বাজারের পুর্ব পার্শ্বের বৌলাই নদীর তীরে প্রকাশ্যে প্রথমে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধরক ভাবে পেটাতে থাকে নদী খননের কাজে নিযুক্ত শ্রমিক সর্দার তাজুল ইসলাম, ড্রেজারের ইঞ্জিন অপারেটর জামিল হোসেন ও ড্রেজার ইঞ্জিনিয়ার কার্তিক কুমার ঘোষ। এরপর দ্বিতীয় দফায় মাটিতে ফেলে হাতের ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে ওই ব্যাক্তির পায়ের পাতায় লাঠি দিয়ে বারবার প্রহার করা হয়। দূর থেকে এমন ববর্বরতার দৃশ্য দেখে ছুটে আসেন আশপাশে থাকা লোকজন। স্থানীয় এক ব্যক্তি সুযোগ বুঝে প্রহারের এমন দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন এ ঘটনার পর থেকে ওই মানসিক প্রতিবন্ধি লোকটিকে ওই এলাকায় আর দেখা যায়নি। ড্রেজারের শ্রমিক সর্দার তাজুল ইসলাম ওই ব্যাক্তিকে প্রহারের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, হাউজ বোটে থাকা সোহাগ নামের এক ব্যক্তির মোবাইল ফোন চুরির সময় বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ওই ব্যাক্তিকে আটক করা হয়।’ আটকের পর ওই ব্যাক্তির নিকট চুরি যাওয়া মোবাইল ফোন সেট পেয়েছেন কীনা এমন প্রশ্নের উওর এড়িয়ে যান তিনি।’ নদী খনন কাজের সুপারভাইজার শিমুল আল মাসুম জানান, চোর সন্দেহে ওই ব্যাক্তিকে মারধর করা হয়েছে বলে শুনেছেন। খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ব্যাক্তিকে ছাড়িয়ে দেন বলেও জানান তিনি। উপজেলার সুখাইড় রাজারপুর উওর ইউনিয়েনের ইউপি সদস্য ইমান আলী জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন ওই ব্যাক্তিকে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। তিনিসহ স্থানীয় লোকজন ওই ব্যাক্তিটি মানসিক প্রতিবন্ধি বলে জানালেও ড্রেজারের লোকজন তবুও ওই ব্যাক্তির ওপর দফায় দফায় নির্যাতন চালাতে থাকেন।’ ধর্মপাশা থানার ওসি সুরঞ্জিত তালুকদার শনিবার রাতে বলেন, ঘটনার তদন্তে শনিবার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রত্যক্ষদমর্শীদের নিকট থেকে ঘটনার সত্যতা খুঁজে পেয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন খন্দকার বলেন, ‘চুরি করে থাকলে তাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করতে পারতো যদি আইন নিজের হাতে তুলে ওই মানসিক প্রতিবন্ধি ব্যাক্তিকে মারধর করে থাকে তাহলে বিষয়টি অমানবিক ও বর্বরতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
Leave a Reply