নতুন আলো প্রতিনিধি : সুনামগন্জের জগন্নাথপুর থানার চাঞ্চল্যকর শাহজাহান অপহরন ও হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন, ঘটনার মূল হোতা সহ ০৩ জন আসামী গ্রেফতার, আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান
জগন্নাথপুর থানার দিগলবাগ (আটঘর) গ্রামের মৃত মদরিছ আলীর ছেলে শাহজাহান আলী (৩২) কে অপহরন পূর্বক হত্যাকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত মুল হোতা সহ ০৩ জন কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হল দিগলবাগ (কালাইনজোড়া) গ্রামের মৃত ইউনুছ উল্লার ছেলে আল আমিন লিটন (৩৬), উত্তর কালনীরচর গ্রামের মুত সুন্দর আলীর ছেলে মোঃ সুহিন মিয়া (৩৫) এবং দিগলবাগ (কালাইনজোড়া) গ্রামের মৃত আবরুজ উল্লার ছেলে মোঃ ফুরুক মিয়া (৫৬)। এদের মধ্যে লিটন ও সুহিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান পূর্বক মূল ঘটনার বর্নণা দেয়। গত ২২/০৫/১৮ খ্রিঃ তারিখ দুপুর ১২ ঘটিকার পর ভিকটিম শাহজাহান আলী নিখোজ হয় মর্মে তার বড় ভাই আব্দুল সামাদ থানায় সাধারন ডায়েরী করে। যার নাম্বার ৯২৭ তারিখ ২৩/০৫/১৮ খ্রিঃ। নিখোজ শাহজাহান কে উদ্ধার করার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আতিকুল আলম খন্দকার প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত শুরু করেন। সাধারন ডায়েরী তদন্তের এক পর্যায়ে নিখোজ শাহজাহান আলী কে সঙ্গবদ্ধ চক্র অপহরন করেছে মর্মে তথ্য প্রমান পাওয়ায় পরবর্তীতে তার ভাই আব্দুল সামাদ বাদী হয়ে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকজন কে আসামী করে জগন্নাথপুর থানায় একটি অপহরন মামলা করে। যার মামলা নাম্বার ০৩ তারিখ ০৬/০৭/১৮ খ্রিঃ ধারা- ৩৬৫/৩৪ দঃবিঃ। মামলা রুজুর পর পুলিশ সুপার বরকতুল্লাহ খান মহোদয়ের নির্দেশে এবং সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (জগন্নাথপুর সার্কেল) মাহবুবুর রহমান মহোদয়ের সার্বিক তত্বাবধানে অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ চৌধুরী ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আতিকুল আলম খন্দকার ও অন্যান্য অফিসার ফোর্স ঘটনায় জড়িত আসামী গ্রেফতারের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের একপর্যায়ে ইং ১৩/০৭/১৮ খ্রিঃ তারিখ রাতে ঘটনায় জড়িত আসামী আল অঅমিন @ লিটন ও সুহিন মিয়াকে গ্রেফতার করে। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা নিজ শাহজাহান আলী অপহরন ও পরবর্তীতে হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত মর্মে স্বীকার করে। পাশাপাশি নৃশংস এই ঘটনায় জড়িত আরো কয়েকজনের নাম প্রকাশ করে। গত ১৪/০৭/১৮ খ্রিঃ তারিখে উক্ত আসামীদের আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা স্বেচ্ছায় শাহজাহান অপহরন ও হত্যাকান্ডে জড়িত মর্মে আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। প্রাথমিক তদন্ত ও স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি পর্যালোচনায় জানা যায়, ভিকটিম শাহজানের সহিত আসামী লিটনের জায়গা জমি নিয়া বিরোধ ছিল পাশাপাশি গরু কেনা বেচাসহ বিভিন্ন পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে তার আপন বোন জামাই দিগলবাগ গ্রামের মৃত আবরুজ মিয়ার ছেলে ফুরুক মিয়া (৫০) এর সাথে বিরোধ সহ একাদিকবার ফুরুক মিয়াকে অপমান করে। উক্ত বিরোধের জের ধরে লিটন ও ফুরুক মিয়ার পরিকল্পনায় ভিকটিম শাহজান কে খুন করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার অংশ হিসেবে আসামী লিটন ৪,০০,০০০/- টাকা অর্থায়ন করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত রমযান মাসে অর্থাৎ ২২/০৫/১৮ খ্রিঃ তারিখ রাত ৯ ঘটিকার পর ঘটনায় জড়িত সহযোগী আসামীর (তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করা সম্ভব নয়) মাধ্যমে ভিকটিম শাহজান কে কালাইনজোড়া বাজারে ডেকে আনে। পরে আসামী লিটন,সুহিন,ফুরুখ সহ আরো ৬/৭ জন ইঞ্জিন চালিত নৌকা যোগে ভিকটিম শাহজান কে নারীর প্রতি প্রলোভন দেখিয়ে জগন্নাথপুর থানাধীন রৌয়াইল গ্রামে লিটনের নানা বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে সহযোগী আসামীদের সহায়তায় ভিকটিম শাহজান কে চায়ের সাথে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে পান করিয়ে দূর্বল করে। পরে রশি দ্বারা গলায় শ্বাস রোধ করে হত্যা করে লাশ পাশ্ববর্তী কুশিয়ারা নদীতে ফেলে দেয়। আসামী লিটন ও সুহিনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে অপর আসামী ফুরুখ কে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অপহরন সহ খুনের ঘটনায় জড়িত অপরাপর আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।
Leave a Reply