ছাতক প্রতিনিধি::গোবিন্দগঞ্জ ছাতক দোয়ারা সংযোগ সড়কের জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্টিলের বেইলি সেতুগুলো আর নেই। ভারি মালামাল নিয়ে চলাচলকারী পরিবহনের জন্য অনুপযোগী ঝুঁকিপূর্ণ ছোট সেতুগুলো সরিয়ে ৯০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে আধুনিক মানের ৯টি সেতু। এর মধ্যে ৩টির নির্মাণ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। দুটি ফোরলেনসহ বাকি ৭টি সেতুর নব্বইভাগ কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী বছরের জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী মাসে একসাথে এসব সেতু উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এই সেতুগুলো নির্মাণের ফলে সিলেট-সুনামগঞ্জের যোগাযোগ ও ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্র জানায়, সুরমা সেতুর দক্ষিণ পাড়ে গোবিন্দগঞ্জ থেকে ছাতক সড়কে ৬টি ও উত্তর পাড়ে দোয়ারা সড়কে ৩টি সেতু নির্মিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৩২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক সড়কে ৪০ দশমিক ৯৭৪ মিটার তকিপুর, ৪০ দশমিক ৯৭০ মিটার হাসনাবাদ ও ৩৪ দশমিক ৮৮ মিটার মাধবপুর সেতু নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এছাড়া, ৫৭ দশমিক ৬৯৮ মিটার গড়গাঁও সেতুর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই সড়কের অপর অংশে ৩৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ফোরলেন ৬৩ দশমিক ৭৯ মিটার পেপার মিল সেতু ও ৬৩ দশমিক ৭৯ মিটার রহমতভাগ সেতুর নব্বইভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সুরমা সেতু পার হয়ে এ সড়কের দোয়ারাবাজার অংশে ২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৭ দশমিক ৯২ মিটার টেঙ্গারগাওঁ, ৩৪ দশমিক ৮৮ মিটার লক্ষীবাউর ও ৩১ দশমিক ৮২৮মিটার নৈনগাঁও সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সওজ ছাতক সড়ক উপ বিভাগের উপ সহকারি প্রকৌশলী মাসুম আহমদ সিদ্দিকী জানান, অবশিষ্ট কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। আগামী বছরের জানুয়ারী অথবা ফেব্রুয়ারী মাসে সেতুগুলো উদ্বোধন করা যাবে।
প্রাকৃতিক সম্পদ ও শিল্পের কাঁচামালের জন্য ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বাণিজ্য অঞ্চল হিসেবে ছাতকের খ্যাতি রয়েছে। তখন নদী পথে স্টিমার ও জাহাজ দিয়ে বণিকরা মালামাল আনা নেওয়া করতেন। এরপর সড়ক পথের সুবিধার জন্য গুরুত্ব অনুধাবন করে ছাতকের সাথে রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। বর্তমান আধুনিক সময়ে ব্যবসা বাণিজ্যে কম সময়ে দ্রুত মালামাল পরিবহনে নৌপথের চেয়ে সড়ক পথের গুরুত্ব বেড়েছে। ছাতকে সুরমা সেতু নির্মাণ ও গোবিন্দগঞ্জ, ছাতক, দোয়ারা সড়কে একসাথে আধুনিক ৯টি সেতু নির্মাণে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে। সিলেট থেকে ছাতক রেল পথের আধুনিকায়ন এবং এই রেলপথ ছাতক থেকে সুনামগঞ্জ, মোহনগঞ্জ পর্যন্ত নির্মাণ হলে এ অঞ্চল ব্যবসা বাণিজ্যে অনেক এগিয়ে যাবে।
ছাতক-দোয়ারাবাজার নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ছাতকে শুধু ছাতক সিমেন্ট ও লাফার্জ সিমেন্ট, আকিজ ফ্যাক্টরী, রেলের স্লিপার কারখানা বা অধুনালুপ্ত পেপার মিলই নয়, এখানে সোনালী চেলায় ইছামতি শুল্ক স্টেশন রয়েছে। ছাতকের ইসলামপুর বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মিত হচ্ছে।
ব্যবসা বাণিজ্যের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও সড়ক যোগাযোগে অনুন্নত থাকায় পুরোপুরি বিকশিত হতে পারছে না এ অঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি এ এলাকায় শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার অপার সম্ভাবনা থাকলেও সড়ক পথে যোগাযোগের অভাবে গড়ে উঠছে না নতুন শিল্প কারখানা। সুরমা সেতুকে কেন্দ্র করেই এই সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো ভেঙ্গে নতুন ৯টি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এর ফলে এ অঞ্চলে যোগাযোগ ও ব্যবসার নতুন যোগ সূচনা হবে।