প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার কড়া সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘নুরুল হুদার আচার-আচরণ কাজ-কর্ম কথাবার্তায় মনে হয়, তিনি নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক কোন পদে নয় বরং তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোন পদে দায়িত্ব পালন করছেন। আর নির্বাচন কমিশনারকে লীগের অফিসটি দেয়া হয়েছে ইসি ভবনে।’
তিনি বলেছেন, ‘গত রবিবার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের প্রচারের সময় ওয়ারিতে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর বর্বর কায়দায় হামলা করে। সেই হামলায় তাদের মদদ ও সহযোগিতায় ছিলো পুলিশ।’
‘পরে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান তার ওপর মহলের সাথে যে কথাবার্তা বলছিলেন তার ভিডিও ক্লিপ সোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। তিনি বলছিলেন, যেখানে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলছেন, ‘পরিস্থিতি ‘নরমাল’ (স্বাভাবিক) আছে। ইশরাকের (ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী) পার্টি মতিঝিল এলাকায় চলে গেছে। আর আমাদের যে পার্টি আছে, (নৌকার লোকজন) ওরা আছে-সেন্ট্রাল উইমেন্সের (সেন্ট্রাল উইমেন কলেজ) সামনে। এটা নিয়ে সিইসিকে সাংবাদিকগণ প্রশ্ন করলে তার জবাবে নুরুল হুদা বললেন, ‘পার্টি মানে পুলিশ, মানে তাদের দল, পুলিশের সাথে যে লোকজন থাকে তাদেরকে পার্টি বলে।’
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, পৃথিবীতে যুগে যুগে দুই একজন গণবিরোধী স্তাবক ও বিশ্বাসঘাতকদের সৃষ্টি হয়েছে যাদের কারণে একটি জাতি স্বাধীনতা হারিয়েছে অথবা করুণ দশায় পতিত হয়েছে। এই পা চাটা গোলামরা শুধুমাত্র নিজেদের পদ ও ক্ষমতার স্বার্থে পুরো জাতিকে ভয়াবহ বিপদের মুখে ফেলে দেয়। তাদেরই মতোই নতুন এক নিলাজ, দলকানা, সেবাদাস প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে জাতির স্কন্ধে চাপিয়ে দিয়েছে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ।’
বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘গণতন্ত্রধ্বংসকারী নুরুল হুদা মনে করেন দেশবাসী সব বোকা আর তিনি খুব চতুর চালাক। তিনি দেশের মানুষকে ব্যাকরণ শেখান! এই সকল ব্যাখ্যার জন্য সাধারণ মানুষ নুরুল হুদা সাহেবকে অনেক আগে থেকেই বিশ্বাস করে না। তাঁর বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে- সাধারণ আওয়ামী লীগরা এতো কঠোর হয় না, যতটা সিইসি কঠোর (লীগের জন্য)। কতটা দলকানা হলে মানুষ এতোবড় নিলর্জ্জ হতে পারে। সিটি নির্বাচন উপলক্ষে সারা সিটিতে আতঙ্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশই তৈরি হয়নি, যাতে করে মানুষ ভোট কেন্দ্রে যায়। ইভিএম এর প্রতি যে মানুষের অনাস্থা ও অনাগ্রহ তা দেখা গেছে নির্বাচন কমিশন মসজিদের মাইক দিয়েও ইভিএম এর কার্যক্রম দেখাতে লোক খুঁজে পায়নি। মানুষ এটিকে প্রতারণার মেশিন বলেই মনে করছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ১১ বছরের শাসনামলে দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অগণিত অসত্য ও বানোয়াট মামলা দিয়ে নাজেহাল করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের ভয়ে নেতাকর্মীরা যেখানে এলাকাছাড়া, ঘরছাড়া সেখানে বিএনপি বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ঢাকায় জড়ো করছে, আওয়ামী নেতাদের এধরনের বক্তব্য প্রদানের উদ্দেশ্যই হলো- তারাই বৈধ ও অবৈধ অস্ত্রধারী দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। গতকাল পর্যন্ত নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক চলছে। তাপসের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় এমপি আমির হোসেন আমু সার্বক্ষণিক তার পাশেই ছিলেন। তিনি তাপসের প্রধান নির্বাচনী এজেন্টও। এমপি শফিকুর রহমান প্রকাশ্যে আতিকের পক্ষে ভোট চেয়েছেন।’
দলের চেয়ারপারসনের অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রাণপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটেছে। অথচ অমানবিক ও প্রতিহিংসাপরায়ণ অবৈধ সরকার বেগম জিয়ার বিপদজনক অসুস্থতাও ভ্রুক্ষেপ করছে না। সরকারের এই অমানবিক ও অসুস্থ আচরণই প্রমান করে যে, তারা বেগম জিয়ার প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র করছে।’
প্রেস ব্রিফিং শেষে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা ও সাজা প্রত্যাহারের দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবারও বিএনপি কার্যালয়ের নিকট এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
মিছিলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ওমর ফারুক কাওসার, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান রনি, ছাত্রনেতা আখতার আহসান দুলাল, দেলোয়ার হোসেন রাসেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা নাসিরুদ্দিন নাসির, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা মিল্লাত, সুজন, আসলাম, নীরব, শামীম, কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফ, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মামুন হোসেন ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য কে এম রেজাউল করিম রাজু, মো. ওমর ফারুক সাকিল চৌধুরী, তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল নেতা মো. বেলাল হোসেন খানসহ ছাত্রদল কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।