ডেস্ক রিপোর্ট:: আফগানিস্তানে নারীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন। তবে ছেলেমেয়ে এক ক্লাসে এক সঙ্গে পড়তে বা বসতে পারবেন না। এমনকি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থায়ও ছেলেমেয়েদের আলাদা করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন তালেবানের ভারপ্রাপ্ত উচ্চশিক্ষামন্ত্রী। নতুন সরকার গঠনের জন্য রোববার একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন তালেবানরা। সেই বৈঠকেই নারীশিক্ষা নিয়ে এই বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী আবদুল বাকি হাক্কানি। এএফপি।
গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখলের মাধ্যমে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। এরপর কেটে গেছে ১৫ দিন। তবে এখন পর্যন্ত সরকার গঠন করতে পারেনি বিদ্রোহী সংগঠন। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তারা সরকার গঠন করবে। তবে তার আগে কয়েকজন নতুন ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেছে তালেবান। তাদের মধ্যে একজন হলেন ভারপ্রাপ্ত উচ্চশিক্ষামন্ত্রী আবদুল বাকি হাক্কানি।
৯০-এর দশকে যখন তালেবান ক্ষমতায় এসেছিল, তখন নারীদের শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়। তবে এবার আলাদাভাবে দেশ শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে গোষ্ঠীটি। তালেবানের ভারপ্রাপ্ত উচ্চশিক্ষামন্ত্রী বলেন, তারা তাদের ইসলামিক, জাতীয় ও ঐতিহাসিক মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি যুক্তিসংগত ও ইসলামিক পাঠ্যক্রম তৈরি করতে চান। অন্যদিকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতাতেও সক্ষম হতে চান।
তালেবানের শরিয়া আইন অনুযায়ী, আফগানিস্তানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থায়ও ছেলে মেয়েদের আলাদা করা হবে, যা অতিরক্ষণশীল আফগানিস্তানে আগে থেকেই প্রচলিত। আফগানিস্তানে নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে, তার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তালেবান। তবে এ ক্ষেত্রে তালেবান শর্ত দিয়েছে যে, তাদের প্রবর্তিত ইসলামি আইন অনুযায়ী সবকিছু করা হবে। তালেবান অঙ্গীকার রক্ষা করবে কি-না, সে ব্যাপারে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। কোনো কোনো নারী অধিকারকর্মীর বক্তব্য, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যে তালেবান সরকার ছিল, তারাও শরিয়া আইনের কথা বলত। সেখানে দশ বছরের বেশি বয়সের মেয়েদের স্কুলে যেতে দেওয়া হতো না। কোনোরকম বাইরের কাজে তাদের অংশ নিতে দেওয়া হতো না। পুরুষসঙ্গী ছাড়া রাস্তায় বের হতে দেওয়া হতো না। বোরকা পরা বাধ্যতামূলক ছিল। তালেবান এবারেও জানিয়েছে, শরিয়া আইন মেনেই নারী অধিকারের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। ফলে আগের চেয়ে বিশেষ কোনো পরিবর্তন হবে না বলেই তারা মনে করছেন।
এর বিপরীত অভিমতও আছে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের ধারণা, তালেবান আফগান সমাজ এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের মন পেতে চাইছে। ফলে আগের মতো ততটা অনমনীয় মনোভাব তারা দেখাবে না। নারী অধিকারের ক্ষেত্রেও বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। সে কারণেই তারা বলছে, প্রশাসনেও নারীদের প্রতিনিধিত্বের কথা তারা ভাবছে। বস্তুত, স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে তালেবান নারীদের ব্যবহার করতে পারে বলে অনেকেই প্রাথমিকভাবে মনে করছেন।
আফগান সমাজেও তালেবানের বক্তব্য নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কোনো কোনো নারী মনে করছেন, পরিস্থিতির বদল হবে না। আগের মতোই নারীদের ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি হবে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, পরিস্থিতি অন্তত আগের জামানার মতো হবে না। তবে তালেবান নেতারা স্পষ্টই জানিয়েছেন, নারী অধিকারের বিষয়টি দ্রুত স্পষ্ট হবে। সরকার গঠন হলেই এ বিষয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশ জারি হবে।