র্যাগিং শব্দটির সাথে অনেকেই বেশ পরিচিত আবার কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতেই পরিচিতি লাভ করে।র্যাগিং শব্দটির অর্থ-” পরিচিত হওয়া” অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়রদের সাথে জুনিয়রদের আনুষ্ঠানিক পরিচয় পর্বকেই বোঝায়।র্যাগিং শব্দটির আরো
বেশ কয়েকটি অর্থ আছে যেমন -তিরস্কার করা,আবেগে কিছু বলা,দিক নির্দেশনা প্রদান করা ইত্যাদি।
বিশ্ববিদ্যালয় একটি জ্ঞান চর্চার জায়গা,এখানে পড়াশোনা করলে বিশ্বটা কি? তা খুব ভালো করেই জানা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে কমবেশি দেশের সব জেলারই ছাত্রের আগমন ঘটে।ফলে দেশের সব অঞ্চলের মানুষের আচরন,চাহিদা,ভালো মন্দ সব কিছুই জানা যায়। এড়াছা বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগমন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনকে মুখরিত করে। বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ গুলোতে র্যাগিং কথাটি বেশ পরিতিত।অনেকে এটিকে পজিটিভ নিলেও বর্তমান সময়ের সাথে পরিবর্তিত র্যাগিংকে অনেকে পজিটিভ নিচ্ছে না। বর্তমান র্যাগিং এর আচরণ পরিবর্তন করতে করতে চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সব শিক্ষার্থীরাই র্যাগ দেয় না,কিছু সিনিয়র আছে যারা মজা নিতে কিংবা নতুন শিক্ষার্থীদের দিক নির্দেশনা দিতে র্যাগ দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা নতুন ভর্তি হয় মুলত তারাই এর ভুক্তভোগী। সাধারণত মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা একটু বেশিই র্যাগ দেয়। নিজ বিভাগ,অনুষদ কিংবা নিজ হলের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে র্যাগ হচ্ছে – সিনিয়র ও জুনিয়র পরিচয় পর্ব,গান গাওয়া,নাচ,কবিতা আবৃতি,সিনিয়র আপুদের প্রপোজ, রোদে দাঁড়িয়ে থাকা, এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা,গোপন অঙ্গের ছবি ও সাইজ অঙ্কন,বিভিন্ন ভঙ্গিতে কথা বলা,সিগারেট নিয়ে আসা ও বিভিন্নভাবে টর্চার করা।দুঃখজনক হলেও সত্য যে অনেক ছেলে জুনিয়রের প্যান্ট পর্যন্ত খোলতে বলা হয় যা র্যাগিং কে ছাড়িয়ে শ্লীলতাহানিকেই প্রশ্রয় দেয়। মাঝে মাঝে যৌথ ভাবে ঘটানো হয় শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন। নবীনদের আচরণ শেখানোর নামে টর্চার করা মোটেই কাম্য নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা শিক্ষার্থী যখন নতুন ভর্তি হয় কিংবা ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে তখন স্বাভাবিকভাবে তার অনেক কিছুই অজানা থাকে। শহর,উপশহর, গ্রাম কিংবা প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীরা আসে নতুন পরিবেশে- কিভাবে চলাফেরা করতে হয়? থাকতে হয়? তার অনেকটা অংশই অজানা। সাধারণত সিনিয়ররাই জুনিয়রদের ভদ্রতা বজায় রাখা ও সাবলীলভাবে চলাফেরার শিক্ষা দিয়ে থাকেন। যাতে জুনিয়ররা নতুন পরিবেশ সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পায়। যেমন বড়দের দেখলে সালাম দেওয়া,ভালোমন্দ ভাব বিনিময় করা,পড়াশোনার পরিস্থিতি জিজ্ঞেস করা ইত্যাদি। এছাড়া একই ডিপার্ট্মেন্টের সিনিয়ররা সীট/হ্যান্ডনোট দেয় জুনিয়রদের যাতে পরীক্ষায় তেমন সমস্যা না হয়। তাছাড়া পরীক্ষা সম্পর্কে ও বিভিন্ন গাইডলাইন সিনিয়ররা দিয়ে থাকেন। একটা নবীন শিক্ষার্থীর জড়তা কাটে সিনিয়রদের সন্নিদ্ধে। এছাড়া কথা বলা,চাল চলন,উঠাবসা,সবার সাথে আচরন সিস্টেম সব কিছুই র্যাগিং এ শেখানো হয়। চাকুরীজীবনে প্রবেশের সাহায্য ও পেয়ে থাকে বড়দের কাছ থেকে।
আবার অনেক জুনিয়র ধর্মীয় সিনিয়রদের সানিধ্যে লাভে নিজের খারাপ অভ্যাস গুলো সংশোধনী করে।
কিন্তু বর্তমানে র্যাগিং শব্দটি বড় একটি আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পূর্বেই একটা বড় ভয় কাজ করছে তাদের মনে। কিছু র্যাগিং এর প্রভাব উল্লেখ না করলেই নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং এর ফলে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা ও ঘটেছে।র্যাগিং এর নিষ্ঠুর প্রহসন সহ্য করতে না পেরে অনকেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ছেড়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, ঢাবি,রাবি,জাবি,চবিসহ প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট-বড় র্যাগিং চলে।
কিছু কিছু র্যাগিং তাদের নিচু মনমানসিকতার পরিচয়টাই বহন করে।
বর্তমানে র্যাগিং এর মাত্রা চরম পর্যায়ে যাওয়ায় লোক মুখে এর অর্থের পরিবর্তন হয়েছে।র্যাগিং এর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। র্যাগিং বর্তমানে অপরাধ হিসেবে দেখছে বিশেষজ্ঞরা। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং এর বিরুদ্ধে নীতিমালা প্রনয়ণ করছে,অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাজার মেয়াদ বাড়াচ্ছে এমনকি ছাত্রত্ব বাতিলের ও বিধান রাখা হয়েছে। তাই দেশের প্রথম শ্রেণী নাগরিক হিসেবে এই খারাপ আচরণ গুলো ত্যাগ করাই উত্তম বলে মনে করি।