বিশ্বকাপের মাঝেই গলফ খেলতে গিয়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। যে কারণে সবশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে খেলতে পারেননি তিনি। সেই চোট কাটিয়ে আজকের ম্যাচ দিয়ে আবারও বাইশ গজে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। আর ফেরার ম্যাচেই ইতিহাস গড়লেন এই অজি তারকা! দলের বিপর্যয়ে ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস খেলার পথে বার বার হ্যামস্টিংয়ের চোটে পড়েছেন, কিন্তু দমে যাননি। এক পায়ে ভর করে একের পর এক শটের পসরা সাজিয়ে একা হাতে দলকে অবিশ্বাস্য এক জয়ে সেমিফাইনালে তুললেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভারত বিশ্বকাপের ৩৯তম ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রান সংগ্রহ করেছিল আফগানিস্তান। আফগানদের হয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ১২৯ রানে অপরাজিত থাকেন ইব্রাহিম জাদরান।
জবাবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে একশো রানের আগেই ৭ উইকেট হারিয়ে হারের শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটিং তাণ্ডবের সাথে প্যাট কামিন্সের দায়িত্বশীল ইনিংসে ৪৬ ওভার ৫ বলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। দলের হয়ে ২০১ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেছেন ম্যাক্সওয়েল।
২৯২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে নাভিন উল হক, আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও রশিদ খানের জোড়া শিকারে ৯১ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। ট্রাভিস হেড ০, মিচেল মার্শ ২৪, ডেভিড ওয়ার্নার ১৮, মার্নাস লাবুশেন ১৪, জশ ইংলিশ ০, মার্কাস স্টইনিশ ৬ ও মিচেল স্টার্ক ৩ রান করেন।
আরও পড়ুন: জাদুকরী ইনিংস খেলার পর যা বললেন ম্যাক্সওয়েল
এর পরের গল্পটা কেবলই ম্যাক্সওয়েলের। অষ্টম উইকেটে অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে সঙ্গে নিয়ে ২০২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তিনি। যেখানে ৬৮ বলে মাত্র ১২ রান এসেছে কামিন্সের ব্যাট থেকে। বাকিটা সামাল দিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। সেটাও আবার হ্যামস্টিংয়ের চোট নিয়ে।
তিন অঙ্ক ছুঁতে ম্যাক্সওয়েল খরচ করেছেন ৭৬ বল। এরপর ১৫০ রানের মাইলফকে পৌঁছেছেন ১০৪ বলে। সময় যত গড়িয়েছে ততই বিধ্বংসী হয়ে ওঠেছেন তিনি। ১৫০ থেকে ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে খেলেছেন মাত্র ২৪ বল। সবমিলিয়ে ১২৮ বলে নিজের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছেন তিনি।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৩৬ রানে রহমানউল্লাহ গুরবাজের উইকেট হারায় আফগানিস্তান। জশ হ্যাজলউডের বলে মিচেল স্টার্কের হাতে ক্যাচ দিয়ে ২১ রান করেই সাজঘরে ফিরতে হয় এই ওপেনারকে। এরপর উইকেটে আসা নতুন ব্যাটার রহমত শাহকে নিয়ে ইনিংস মেরামত করেন ইব্রাহিম।
এই দুজনে মিলে তৃতীয় উইকেটে তোলেন ৮৩ রান। এই জুটি ভেঙ্গেছেন গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েল। রহমত লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে জস হ্যাজেলউডের হাতে ধরা পড়েছেন ৪৪ বলে ৩০ রান করে। চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক শাহীদিকে নিয়ে আবারও ৫২ রানের জুটি গড়েন ইব্রাহিম।
অবশ্য মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হয়ে শেষ হয় শহীদির ২৬ রানের ইনিংস। উইকেটে এসে আক্রমণাত্মক খেলতে থাকা আজমতউল্লাহ ওমরজাই আউট হন জাম্পার বলে অতি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে। তার ব্যাট থেকে আসে ২২ রান।
এরপর মোহাম্মদ নবি ১২ রান করে ফিরলেও রশিদকে নিয়ে ইনিংস শেষ করে আসেন ইব্রাহিম। এই আফগান ওপেনার তার ইনিংস জুড়ে ৩টি ছক্কা ও ৮টি চারের মার মেরেছেন। রশিদ শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১৮ বলে ৩৫ রান করে। ইনিংস জুড়ে ৩টি ছক্কার পাশাপাশি রশিদ মেরেছেন ২টি চার।
বোলিংয়ে অজিদের হয়ে ৩৯ রানে ২ উইকেট শিকার করেছেন জশ হ্যাজেলউড। এছাড়া মিচেল স্টার্ক, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও অ্যাডাম জাম্পা ১টি করে উইকেট পান।