রাশিয়ার হামলার দুই বছর পূর্তির ঠিক আগে অস্ত্র ও গোলাবারুদের অভাবে ইউক্রেনের প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে সংশয় যখন বাড়ছে, ঠিক তখনই ইউরোপে সেই ঘাটতি মেটাতে বাড়তি তৎপরতা চলছে। মার্কিন কংগ্রেসে রাজনৈতিক জটিলতার কারণে ইউক্রেনের জন্য সহায়তা থমকে গেছে। ফলে ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে আরও জমি হারাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগের সদস্যরা সরকারকে ইউক্রেনের জন্য দূরপাল্লার অস্ত্র পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তবে বিরোধী পক্ষের একাংশ দূরপাল্লার টাউরুস ক্রুড মিসাইল পাঠানোর লক্ষ্যে প্রস্তাব অনুমোদন করাতে পারেনি। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার টাউরুস ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের প্রশ্নে এখনো দ্বিধা ঝেড়ে ফেলতে পারেননি। তবে তিনি সেই সম্ভাবনাও পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি।
ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রে বর্তমানে আমেরিকার ঠিক পরেই জার্মানির স্থান। তবে শলৎস একা সেই দায়িত্ব কাঁধে নিতে চাইছেন না। ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র সরবরাহের জন্য তিনি ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করছেন। চলতি বছরে শলৎস সে দেশের জন্য ৭০০ কোটি ইউরোর বেশি মূল্যের সামরিক সহায়তা পাঠানোর পরিকল্পনা করেছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তিও স্বাক্ষর করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর।
ইউক্রেনের জন্য এত উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে যথেষ্ট স্বীকৃতি সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এমন চাপ সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিউস। বিরোধী পক্ষ সেই সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে সরকারের শরিক দল হিসেবে উদারপন্থি এফডিপিও টাউরুস সরবরাহের পক্ষে সওয়াল করছে। দলের অন্যতম নেত্রী মারি-আগনেস স্ট্রাক-সিমারমান এমনকি বিরোধীদের প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। তার মতে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জার্মানির উপর হামলা চালাতেও দ্বিধা বোধ করবেন না। তিনি বলেন, ইউক্রেনের হাতে আর সময় নেই।
ফাইনান্সিয়াল টাইমস সংবাদপত্রের সূত্র অনুযায়ী ইইউ ইউক্রেনের জন্য প্রায় দেড়শো কোটি ইউরো মূল্যের গোলাবারুদ সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছে। বৃহস্পতিবার ইইউ পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল সদস্য দেশগুলোর উদ্দেশ্যে সেই আবেদন করেছিলেন। পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে তিনি অবিলম্বে সেই পদক্ষেপ নেওয়ার ডাক দিয়েছেন। তবে আগের অঙ্গীকার সত্ত্বেও যথেষ্ট গোলাবারুদ উৎপাদন করতে না পারায় ইউরোপের ক্ষমতা সম্পর্কে সংশয় বাড়ছে।