সোমালিয়ান উপকূলে রুদ্ধশ্বাস ৩১ দিনের বন্দিত্ব শেষে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিক। শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৮ মিনিটে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পর জাহাজটি নাবিকদের নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। ২০ এপ্রিল নাগাদ হামরিয়া বন্দরে নোঙর করবে এমভি আবদুল্লাহ। ওই বন্দরে কয়লা খালাসের পর জাহাজের পরবর্তী গন্তব্য নির্ধারণ করবে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং করপোরেশন। নাবিকদের ইচ্ছা অনুযায়ী উড়োজাহাজ কিংবা এমভি আবদুল্লাহতে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে তাদের।
কবির গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, ‘জাহাজ জিম্মি হওয়ার প্রথম দিনই আমরা কাজ শুরু করি। আন্তর্জাতিক নানা সংস্থার সহায়তা নিই। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে বিষয়টা তদারকির নির্দেশ দেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে নাবিক ও জাহাজ মুক্ত করতে পেরেছি। আশা করি ১৯ কিংবা ২০ এপ্রিল জাহাজ হামরিয়া বন্দরে পৌঁছাবে। সেখান থেকে উড়োজাহাজ কিংবা একই জাহাজে নাবিকদের চট্টগ্রাম ফিরিয়ে আনা হবে।’ গতকাল বিকালে জাহাজে থাকা এক নাবিকের সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ প্রতিদিনের। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা এখনো মহাসাগরে সোমালিয়ান অংশে রয়েছি। এটা বিপজ্জনক জোন হিসেবে পরিচিত। এ জোন অতিক্রম করতে আরও তিন দিন লাগতে পারে। আমাদের জাহাজকে ইইউর নেভাল ফোর্সের দুটি জাহাজ স্কট দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার পর সব নাবিক খোশমেজাজে রয়েছেন।’ জানা যায়, সোমালিয়ান জলদস্যুদের সঙ্গে মুক্তিপণ নিয়ে সমঝোতা হওয়ার পর মুক্তিপণের অর্থ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ছোট উড়োজাহাজ ভাড়া করে অর্থ পরিবহনের জন্য নিয়োজিত সংস্থা। ওই উড়োজাহাজ মুক্তিপণের অর্থ নিয়ে এমভি আবদুল্লাহর ওপর চক্কর দিতে থাকে। এ সময় নাবিকদের জাহাজের ডেকে এক লাইনে দাঁড় করায় দস্যুরা। উড়োজাহাজ থেকে নাবিকদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয় হাত তোলার। এরপর সব নাবিক একসঙ্গে হাত তোলেন। সব নাবিক অক্ষত আছেন এমন নিশ্চয়তা পাওয়ার পর ডলারভর্তি তিনটি ব্যাগ এক এক করে ফেলা হয় সাগরে। জাহাজের পাশে আগে থেকেই স্পিডবোটে অপেক্ষায় ছিল দস্যুরা। জাহাজ থেকে ফেলার পর ডলারভর্তি ব্যাগ উল্লাস করতে করতে পানি থেকে সংগ্রহ করে দস্যুরা। ডলারভর্তি ব্যাগ সংগ্রহের পর তা আসল কি না পরীক্ষা করে দস্যুরা। আসল ডলার নিশ্চিত হওয়ার পর তা নিজেদের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা করে নেয়। শনিবার বিকালে মুক্তিপণের অর্থ পেলেও দস্যুরা তৎক্ষণাৎ জাহাজ থেকে নেমে যায়নি। আরও আট ঘণ্টা পর ৬৫ জলদস্যু জাহাজ থেকে নামে। ধারণা করা হচ্ছে, জলে-স্থলে নজরদারি এড়াতেই গভীর রাতে দস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যায়। মুক্তিপণের অর্থ পরিশোধের সময় জিম্মি জাহাজটির অদূরে ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ। আবার স্থলভাগে ছিল সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড পুলিশের টহল। দস্যুরা নেমে যাওয়ার পর আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা দেয় জাহাজ।