নতুন আলো নিউজ ডেস্ক : বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, যা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১২ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে।
পাশাপাশি দিনাজপুর ও রংপুর এলাকায় গ্যাসের সমস্যা সমাধানের জন্য আগামী ডিসেম্বর নির্বাচনের আগেই রংপুরে গ্যাসের পাইপলাইন বসানোর কাজ করা হবে বলে ঘোষণা দেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
শুক্রবার দুপুরে দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনিতে খনি উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম-জিটিসির ব্যবস্থাপনায় ৯নং স্টোপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
উত্তরাঞ্চলের মানুষকে ভাগ্যবান হিসেবে উল্লেখ করে নসরুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে। কিন্তু উত্তরাঞ্চলে তার আগেই শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। দিনাজপুর ও রংপুরে গ্যাসের সরবরাহের জন্য যাচাই-বাছাই কাজ চলছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আগামী ডিসেম্বরের আগেই রংপুরে গ্যাসের পাইপলাইন বসানো হবে। এছাড়াও এই অঞ্চলের তেলের চাহিদা পূরণে আর কার্গো দিয়ে নয়, পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল সরবরাহ করা হবে। এ জন্য রুমানীগর থেকে পাইপলাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আগামীতে পাইপলাইনের মাধ্যমে এই অঞ্চলে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমানে এই খনি থেকে দৈনিক প্রায় পাঁচ হাজার টন পাথর উত্তোলন হচ্ছে। এই পাথর উত্তোলন আরও বাড়িয়ে দৈনিক ৩০ হাজার টন উত্তোলন করতে হবে। তাহলেই পেট্রোবাংলার এই প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক হবে।
দেশের পাথরের ব্যাপক চাহিদার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের দৈনিকে এক লাখ টন পাথরের চাহিদা। এই চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে পাথর আমদানি করতে হচ্ছে। তাই দেশের এই একমাত্র পাথর খনিটির পাথর উত্তোলন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এই অঞ্চলের ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি যদি ৪০ হাজার টন কয়লা উত্তোলন করতে পারত তাহলে আমরা এই অঞ্চলে আরও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন করতে পারতাম। এ জন্য বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিকে সন্তোষজনক কয়লা উত্তোলনের গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির কয়লা উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির চেয়ারম্যান ড. সিরাজুল ইসলাম কাজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমীন, মধ্যপাড়া পাথর খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম, নুরুল আওরঙ্গজেব, জিটিসির প্রকল্প পরিচালক আলিসকসেন্দ্রো মালসভ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের জিএম (অপারেশন) আসাদুজ্জামান আসাদ, জিটিসির মহাব্যবস্থাপক জাবেদ সিদ্দিকী ও জামিল আহম্মেদসহ মধ্যপাড়া পাথর খনি ও জিটিসির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে মধ্যপাড়া পাথর খনির ৯নং স্টোপের উদ্বোধন করেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী। এই স্টোপ থেকে মাসে এক লাখ ২০ হাজার টন পাথর উত্তোলন হবে বলে জানান খনি কর্তৃপক্ষ।
দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে ২০০৭ সালের ২৫ মে। প্রথম অবস্থায় খনি থেকে দৈনিক দেড়হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ টন পাথর উত্তোলন হলেও, পরে তা নেমে আসে মাত্র ৫০০ টনে। এই অবস্থায় খনির উৎপাদন বাড়াতে ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয় বেলারুশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম-জিটিসিকে। জিটিসি ১৭১.৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ছয় বছরে ৯২ লাখ টন পাথর উত্তোলন করে দেয়ার চুক্তিবদ্ধ হয়। বর্তমানে জিটিসি তিন শিফটে খনির উৎপাদন দৈনিক প্রায় পাঁচ হাজার টনে উন্নীত করে।
Leave a Reply