এক . হে ৫৬ হাজার বর্গ-মাইলের প্রিয় মাতৃভুমি “মা”! আজ তুমি এক মহা-ক্রান্তিকাল পার করে যাচ্ছ। নেই স্বাধীনতা, নেই সার্বভৌমত্ব, নেই গনতন্ত্র ও মানবধিকার। চলছে অন্যায় -অবিচার, খুন-গুম, ধর্ষন, ডাকাতি ও ক্রস ফায়ার। বাতাসে ভাসছে মানুষের লাশের গন্ধ, কানে আসছে ক্রন্দনের সুর। একাত্তরে রাত দুপুরে কেহ দরজা ধাক্কা দিলে বা কড়া নাড়লে, ভয়ে ভয়ে ঘরের ভিতর থেকে জিজ্ঞেস করা হতো কে? ওপাশ থেকে উত্তর আসতো আমরা পাকিস্তানি মিলেটারি। আজ স্বাধীনতার ৪৭ বৎসর পর ২০১৮ তে রাত দুপুরে কেহ দরজা ধাক্কা দিলে বা কড়া নাড়লে, ঠিক তেমনি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করা হয় কে? ওপাশ থেকে উত্তর আসে আমরা ডি বি পুলিশ। অতপর পড়তে হয়,,,, লা-হাওলা কুয়াতা,,,,,,,,,,,আলি-উল-আজিম।
হে মাতৃভুমি “মা”, হে জন্মভুমি “মা”, তোমার কোলে জন্ম নেওয়া, তোমার বীর সন্তানেরা ৫৬ হাজার বর্গ-মাইলের মাতৃভুমির,,,,, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গনতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করেছে, শহীদ হয়েছে, বারংবার। তোমার বীর সন্তানদের রয়েছে গৌরবের ইতিহাস, সন্মানের ইতিহাস। ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে, ৫২, ৫৪, ৬৯, ৭০, ৭১ ও ৯০ এর ইতিহাস। এ- সবই গৌরবের ইতিহাস, সন্মানের ইতিহাস, কৃতিত্বের ইতিহাস। যার ফলে, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। শতকরা ৯০ জনের উপরে মুসলিম বাসযোগ্য দেশ। রাষ্ট ধর্ম ও ইসলাম। জনসংখ্যার দিক দিয়ে দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ, এই বাংলাদেশ। এত সব গৌরব, সন্মান ও কৃতিত্বের অধিকারী তুমি “মাতৃভুমি “মা”। এ সব অর্জন প্রায় ষাট বৎসরের অর্জন। এই সব অর্জন আজ গভীর ষড়যন্ত্রে নিমজ্জিত। আর নিশ্চুপ নয়, আর দেরী নয়, হে মাতৃভুমি “মা”, হে জন্মভুমি “মা”, তুমি জবান খুলো।
২ . পাঠক, ২৬ জুন, রাজধানী যখন ঘুমিয়ে ছিল,গুলশানের মত অভিজাত এলাকায় মধ্য রাতের পর অনুমানিক রাত তিন টার দিকে, বিএনপি কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অবঃ) মিজানুর রহমান সাহেবের বাসায় প্রিয় মাতৃভুমির এক বিভৎস চেহারা ফুঠে উঠল সারা জাতির সামনে। সেই বাসার ভিতর থেকে কিছু মহিলার ভয়ার্ত কন্ঠ শুনা যাচ্ছিল। তারা সবাই ভয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে চিৎকার করে আর্তনাদ করছিলেন,,,,,, আর দোয়া পড়া শুনা যাচ্ছিল,,,,, লা-হাওলা কুয়াতা,,,,,,,আলি-উল আজিম! মেজর (অবঃ) মিজান সাহেবের সৌভাগ্য তাঁহার মেয়ে রাসমিয়া অসীম সাহসী একজন কন্যা সন্তান। আমি তাঁহার এই ভয়ার্ত রাতের সাহসকে ধন্যবাদ জানাই। কেননা, রাসমিয়ার লাইভ ভিডিও টির সুবাদেই জাতি সন্পূর্ন ঘটনাটি জানতে পেরেছে। তিনি ডেইলী স্টার পত্রিকার একজন সাংবাদিকও বঠে। তাহার লাইভ ভিডিও টি দেখে ঐ রাতে আমি কিন্তু ঘুমাতে পারিনি। আমি শিওর অনেকই হয়তো আমার মত ঘুমাতে পারেনি। দৃশ্যটি ছিল খুবই করুণ ও মর্মান্তিক ।
দরজার অপর পাশ থেকে ডিবি পুলিশ নাম ধারীরা সিঁড়ির লাইট অফ করে দরজা ভাঙ্গাঁর জন্য আঘাতের পর আঘাত করছে, আর এ দিকে ঘরের ভিতর থেকে পিতার জীবন রক্ষার্তে, দরজায় চাপ রেখে চিৎকার করে মরনপণ ছেষ্টা চালিয়ে যাচ্চিল। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয় নাই। শেষ পর্যন্ত দরজা ভেঙ্গেঁ তাঁহার আব্বুকে তুলে নিয়ে যায়। রাসমিয়া বার বার চিৎকার করে বলছিলেন,,,” আমি ডেইলী স্টার পত্রিকার সাংবাদিক, আমার আব্বু একজন ওনেস্ট আর্মি অফিসার, ২৭ বৎসর সততার সাথে আর্মিতে সার্ভিস করেছেন। এতো রাতে বাসার দরজা ভাঙ্গঁছেন, সার্চ ওয়ারেন্ট দেখান। অপর পাশ থেকে ডিবি পুলিশ বলছে,” তাদের না কি কোন ওয়ারেন্ট এর প্রয়োজন নাই। পাঠক, মেজর (অবঃ) মিজান সাহেবের মেয়ে ও ডেইলী স্টার পত্রিকার সাংবাদিক রাসমিয়া রহমান আমরিনের লাইভ ভিডিওর দরুন সন্পূর্ন ঘটনাটি জাতি জানল। কিন্তু আরও কত শত শত ঘটনা এ ভাবে অহরহ ঘটছে, দেশ জাতি জানতে পারছে না। আমরা এখানে একজন রাসমিয়ার বাবার কথা জানছি, এ ভাবে শত শত হাজার হাজার রাসমিয়ার কান্নায় এ দেশটির আকাশ বাতাস ভারী হয়ে আছে।
হে মাতৃভুমি “মা”, হে জন্মভুমি “মা”, তুমি জবান খুলো।
তিন. দেশ এক আতংকিত জনপদে পরিণত হয়েছে। মাদক অভিযানের নামে মাদকের মূল সম্রাটদেরকে জিয়ে রেখে পবিত্র রমজান মাসে বন্দুক যুদ্ধের নামে প্রায় এক শত জনকে হত্যা করা হয়েছে। কাউন্সিলার একরামুলের ক্রসফায়ারের অডিও ক্লিপে তাহার মেয়ে আর্তনাদ শুনে কার হৃদয় না শিহরিয়া উঠেছে। এ ভাবে প্রতিটি হত্যা ও ক্রস ফায়ারের ঘটনাই হৃদয় বিদারক। এই ভাবে মানুষ হত্যা করা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
★সোহানের মা বলছিলেন,” আমার ছেলেকে যদি মেরেই ফেলবে, তবে তার চোঁখ কেন তুলে নিলে? হাত কেন কেঠে ফেললে?★ নয় বছরের লিজা দোকান থেকে রং-পেন্সিল কিনতে গিয়ে ধর্ষিত হয়ে লাশ পৌঁছে মায়ের কাছে। ★টাঙ্গাইলে দিগম্বর ছেলের সামনে মাকে ধর্ষন। ★একজন বাবা তিনি শ্রেষ্ট বিদ্যাপিটের শিক্ষা গুরু হয়েও তাঁহার প্রাণপ্রিয় পুত্র হত্যার বিচার চান নাই। কারন তিনি বাঁচতে চান! হে মাতৃভুমি “মা” তুমি জবান খুলো।
এদিকে গনতন্ত্রের প্রতিক, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের আপোষহীন নেত্রী, এই মহুর্তে দেশের একমাত্র জনপ্রিয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ন অন্যায় ভাবে বন্দী করে রাখছে ফ্যাসিষ্ট সরকার। স্যাঁত-স্যাঁতে আলো বাতাস হীন ঘড়ে রেখে শাররীক ভাবে তাঁহাকে অসুস্হ করে ফেলা হয়েছে। তাঁহার ইচ্ছানুযায়ী চিকিৎসা ও দেওয়া হচ্ছে না। এ যেন নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মতন হীন উদ্দেশ্যে সম্পূর্ন পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭৩ বছর বয়স্ক নেতাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। হে মাতৃভুমি, এ ছাড়া তোমার হাজার হাজার সন্তানদেরকে জেলবন্দী করে রাখছে এ ফ্যাসিষ্ট । আজ হাজার হাজার জেলবন্দী সন্তানেরা আকাশের দিকে তাকিয়ে ক্রন্দন করছে, আর
বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত হয়ে,ঘড় ছাড়া হাজার হাজার সন্তানেরা বাড়ীর দিকে তাকিয়ে আছে। আদালত তার হারানো স্বাধীনতার জন্য আফসোস করছে।
হে মাতৃভুমি “মা”, হে জন্মভুমি “মা”, তোমার সন্তানেরা আজ কত ভাবে যে অবরুদ্ধ হয়ে আছে। তোমার সন্তানদের আজ নেই কোন স্বাধীনতা,সার্বভৌমত্ব, গনতন্ত্র, নেই মানবিকতা ও ভোটের অধিকার। আর কত লাঞ্চিত, বঞ্চিত হবে? তার শেষই বা কোথায়?
তোমার কোলে জন্ম নিয়ে কবি না বলে গেছেন,,,,,,
“অসত্যের কাছে কভু, নত নাহি হবে শির,
ভয়ে কাঁপে কা-পুরুষ,লড়ে যায় বীর।”
হে মাতৃভুমি “মা” জন্মভুমি “মা”,একাত্তরের মতন আবার গর্জে উঠো, একাত্তরের মতন আবার জবান খুলো। নইলে তোমার সন্তানেরা আবার পরাধীন হয়ে যাবে।।।
লেখকঃ
লেখক ও কলামিস্ট
সায়েক এম রহমান
Leave a Reply